গাড়ি ও স্বর্ণের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে বাড্ডা থানায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, এই মামলাগুলোর বিপরীতে ৭ দিন করে ২১ দিনের রিমান্ড আবেদন জানাবে পুলিশ। আজ রোববার (২২ নভেম্বর) সকালে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আজই তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে জানা গেছে। র্যাবের দায়ের করা মামলা ৩টির তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে বাড্ডা থানা পুলিশ। তবে এই মামলা ৩টি থানা পুলিশের কাছ থেকে তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য শিগগিরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন জানাবে র্যাব। রোববার (২২ নভেম্বর) সকালে র্যাবের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মো. মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে ৩ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, আজ সকালে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আজই তাকে আদালতে তোলা হবে এবং গ্লোন্ডেন মনিরকে তিন মামলায় সাত দিন করে মোট ২১ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ এ তথ্য জানান।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) রাত ১০ থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোল্ডেন মনিরের বাসায় অভিযান শুরু হয়, যে অভিযান সমাপ্ত হয় গতকাল শনিবার (২১ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টায়। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। র্যাব জানিয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গোল্ডেন মনিরের বাড়িতে এই অভিযান চালানো হয়। গোল্ডেন মনিরের রয়েছে স্বর্ণ ও সম্পদের পাহাড়। কয়েকমাস আগে গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য পায়, মনির ওরফে গোল্ডেন মনিরের কাছে অবৈধ অস্ত্র এবং মাদক রয়েছে। যা তদন্ত করেতে গিয়ে তার নানান অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসে। বাড্ডা, নিকেতন, কেরানীগঞ্জ, উত্তরা, নিকুঞ্জে ২০০ বেশি প্লট রয়েছে মনিরের। সব মিলিয়ে তার ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা। রাজউকের সিল নকল করে ভূমিদস্যুতার ১টি এবং দুদকের ১টি মামলা রয়েছে মনিরের বিরুদ্ধে। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের ‘অর্থ জোগানদাতা’ বলেও ইংগিত দিয়েছেন র্যাব কর্তবর্তারা। তার বিরুদ্ধে নতুন ৩টি মামলাসহ ৫ টি মামলায় দাঁড়িয়েছে।
অভিযান শেষে শনিবার (২১ নভেম্বর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা, অস্ত্র ও মাদক রাখার দায়ে বাড্ডা থানায় গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করা হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ৩০টি প্লটের কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়াও গোল্ডেন মনিরের বাসা থেকে ১ টি বিদেশি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি, বিদেশি মদ, ৬০০ ভরি (৮ কেজি) স্বর্ণ, ১০টি দেশের মুদ্রা (টাকা হিসেবে ৯ লাখ) এবং নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। মনির মূলত হুন্ডি ব্যবসায়ী, স্বর্ণ চোরাকারবারি এবং ভূমির দালাল। তার ১টি অটোকার সিলেকশন রয়েছে। গাড়ির ১ টি শো রুম রয়েছে। এর পাশাপাশি রাজধানীর গাউসিয়া মার্কেটে ১ টি স্বর্ণের দোকান সম্পৃক্ততা রয়েছে তার। তার বাসা থেকে অনুমোদনবিহীন ২ টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছে র্যাব, যার একেকটির মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এছাড়াও তার কার সিলেকশন থেকে আরো ৩ টি বিলাসবহুল ৩ টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত মনির ৯০ দশকে গাউসিয়া মার্কেটে একটি দোকানের কাপড়ের সেলস্ ম্যান ছিলো। পরবর্তীতে ক্রোকারিজের ব্যবসা, এরপর ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে লাগেজ ব্যবসা এবং সবশেষ স্বর্ণ চোরাকারবারি চক্রের জড়িয়ে যাওয়া। বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ অবৈধভাবে সে দেশে নিয়ে এসেছে। ঢাকা, সিঙ্গাপুর এবং ভারত ছিলো তার স্বর্ণ চোরাচালানের রুট। র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গোল্ডেন মনির কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী থেকে ভূমিদস্যু ও স্বর্ণ চোরাচালানকারী হয়ে ওঠে। তিনি রাজউক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভুয়া কাগজপত্র করে জমির মালিক হন। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য র্যাব থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করা হবে।