ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় আসামি মো. মজনুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের পর আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে মজনু নিজের হাতে নিজেই কামড় দেন।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুনাহার এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে একই সঙ্গে দণ্ডিতের ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং আনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় রায় ঘোষণার আগে কাঠগড়ায়ও আসামি মজনু চিৎকার-চেঁচামেচি করেন ও পুলিশকে মারধর করেন। রায় ঘোষণার জন্য আসামি মজনুকে বেলা আড়াইটার দিকে আদালতের কাঠগড়ায় ওঠানো হয়। কাঠগড়ায় ওঠানোর পরই তিনি পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘ভাই আমারে ছাইড়া দ্যান, আমি এতিম, অসহায়। আমার কোনো দোষ নাই। আমি কিছু করি নাই। আমি বাড়ি চইলা যামু, আর ঢাহা আমু না।’
মজনু আরও বলেন, ‘আমি কিছু করি নাই। ধর্ষণ করছে মিলন, দুলাল, ইয়াছিন, আলামিন। পুলিশ টাকা খেয়ে ওদের না ধরে, আমাকে ধরছে। আমি কী ক্ষতি করছি। আল্লাহর কাছে বিচার চাই। হ্যান্ডকাপ খুলে দেন। আমি টোকাই, ভিক্ষা করে খাই।’
ওই সময় পুলিশ মজনুকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তিনি দায়িত্বে থাকা এক পুলিশের পেছন থেকে কলার ধরে আঘাত করেন। এরপর তিনি মুখের মাস্ক, গেঞ্জি খুলে ফেলেন। অশ্লীল ভাষায় পুলিশ, আইনজীবীদের গালাগাল করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রায় ঘোষণা শেষে মজনুকে যখন এজলাস থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন কিছুটা সময় তিনি নীরব ছিলেন। তবে একটু পথ যেতে না যেতেই বেঁকে বসেন। মজনু পুলিশের হাত থেকে ছুটে আদালত থেকে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাকে নিচে নামাতে বেগ পেতে হয় প্রায় ২০ জনের মতো পুলিশ সদস্যকে। ৬ তলা ভবন থেকে নিচে নামানোর পর কারাগারে যেতেই চাইছিলেন না মজনু। তিনি মাটিতে বসে পড়েন। এ সময় তিনি নিজের হাতে নিজেই কামড় বসিয়ে দেন।
এর আগে একই ট্রাইব্যুনালের বিচারক গত ১২ নভেম্বর মামলাটির যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৯ নভেম্বর দিন ঠিক করেন। তারও আগে এ মামলায় ট্রাইব্যুনাল ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ভুক্তভোগী, তার বাবাসহ ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
এ মামলায় গত ২৬ আগস্ট কারাগার থেকে ভার্চ্যুয়ালি চার্জগঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেখানে মজনু নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। মামলাটিতে গত ১৬ মার্চ চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত ১৬ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মজুন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
চার্জশিটে বলা হয়, গত ৫ জানুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানার কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ফুটপাত দিয়ে ৪০-৫০ গজ সামনে আর্মি গলফ ক্লাব মাঠ সংলগ্ন স্থানে ভুক্তভোগী (২১) পৌঁছালে আসামি মজনু তাকে পেছন থেকে গলা ধরে ফুটপাতে ফেলে গলা চেপে ধরেন। এ সময় ওই ছাত্রী চিৎকার করতে গেলে আসামি তাকে কিল-ঘুষি মেরে ভয়ভীতি দেখালে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন মজনু ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায়ই ধর্ষণ করেন। তিনি একজন অভ্যাসগতভাবে ধর্ষণকারী। মজনু প্রতিবন্ধী, পাগল, ভ্রাম্যমাণ মহিলার সম্মতি ব্যতীত এই অনৈতিক কাজ করে আসছেন। ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় থাকেন। তার স্থায়ী কোনো বসবাসের জায়গা নেই।
এর আগে র্যাব-১, উত্তরা এর সিপিসি-১ এর চৌকশ দল গত ৮ জানুয়ারি মজনুকে ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শেওড়া বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশের পাকা রাস্তার ওপর থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তার স্বীকারোক্তি মতে ভুক্তভোগীর ব্যাগ, মোবাইল ও পাওয়ার ব্যাংক এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত একটি জিন্সের প্যান্ট ও একটি জ্যাকেট উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। ঘটনার দিন আসামি ভুক্তভোগীকে একা পেয়ে জোর করে ধরে ফুটপাতের পাশে জঙ্গলের ভেতরে ফেলে ধর্ষণ করেন।
তার আগে গত ৬ জানুয়ারি ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ভিকটিম তার বড় মেয়ে (২১)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। থাকেন রোকেয়া হলে। গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে রওনা করেন। রাত ৭টার দিকে বাসটি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে থামে। তখন ওই ছাত্রী বাস থেকে নেমে ফুটপাট দিয়ে ৪০-৫০ গজ শেওড়ার দিকে হেঁটে আর্মি গলফক্লাব মাঠ সংলগ্ন স্থানে পৌঁছালে পেছন দিক থেকে অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ বছর বয়সী যুবক গলা ধরে তাকে ফুটপাতের পাশে মাটিতে ফেলে দেন এবং তার গলা চেপে ধরেন। এতে ভুক্তভোগী অজ্ঞান হয়ে পড়লে আসামি তাকে ধর্ষণ করেন।