সিলেট বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘নির্যাতনে’ নগরীর আখালিয়ার নেহারীপাড়ার রায়হান আহমদ নিহতের প্রায় একমাস পর এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত বহিষ্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কাশেম এই আদেশ দেন। গত ১১ অক্টোবর মারা যাওয়ার পর রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ফাঁড়িতে ধরে এনে রাতভর নির্যাতনের ফলে রায়হান মারা যান। এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান শেষে ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ওইদিনই পালিয়ে যান আকবর।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ১৪ অক্টোবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যায় আকবর। নোমান নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক ও স্থানীয় এক দালাল তাকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করেন বলেও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান। তবে প্রথম থেকেই আকবরের পালানোর সাথে সিলেট মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। রায়হানের পরিবার থেকেও এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আকবর হোসেন ভূঁইয়ার পলায়নের ঘটনায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কেউ জড়িত কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ক্রাইম অ্যানালিসিস) মো. আয়ুবকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটি গত ২৬ অক্টোবর তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আকবরের পালানোর জন্য মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়। এদিকে, এই তদন্ত কমিটি সিলেটে এসে তদন্ত কাজ শুরু করার পর গত ২১ অক্টোবর আকবরকে পালানোতে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে বন্দরবাজার ফাঁড়ির আরেক এসআই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর সমালোচনার মুখে গত ২২ অক্টোবর সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা হয়।
সিলেটের নতুন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ দায়িত্ব গ্রহণের পর জানান, আকবরের পালানোর সাথে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত নিজেদের ওই ‘সিনিয়র অফিসার’কে খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ।
অপরদিকে, রায়হান হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবর ছাড়াও এই ঘটনায় পিবিআই এ পর্যন্ত আরও ৩ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন উর রশিদকে দুই দফায় আটদিন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহীকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে তারা কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হননি। এছাড়া রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী সাইদুর শেখ নামের এক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।