নওগাঁয় আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে এমন অজুহাতে হঠাত্ করে ধান ও চালের দাম কমে গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে চালের দাম কমেছে ১ থেকে ২ টাকা। আর প্রতি মণে ধানের দাম কমেছে ৫০ টাকার মতো। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি মিল ও চাল ব্যবসায়ীরা মজুতকৃত চাল বাজারে সরবরাহ করায় বাজারে ধান ও চালের দাম কমেছে। প্রতি মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াইয়ের শুরুতে মিল ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ধানের দাম কমিয়ে ফায়দা লুটে। বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, জেলায় চলতি বোরো, আমন মৌসুমে প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। আমন ধান পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরু হবে আরো এক মাস পরে অর্থাত্ নভেম্বরের শেষ দিকে। জেলায় সবে কয়েক বিঘা জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে। এদিকে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের অজুহাতে জেলার মিল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে বাজারে ধানের দাম কমে গেছে।
মহাদেবপুর উপজেলার সরস্বতীপুর বাজারের ক্ষুদ্র ধান ব্যবসায়ী মাহবুব জামান জানালেন, গত সপ্তাহের চেয়ে প্রতি মণ ধান ৫০ টাকা কমে কিনতে হচ্ছে। বর্তমানে ইরি-বোরো ও আউশ জাতের জিরাশাইল ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৮০ টাকা, পারিজাম ১ হাজার ৫০ টাকা ও কাটারিভোগ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ টাকা।
ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ীরা জানান, নওগাঁর মিলার ও আড়তদারদের গুদামে অবৈধভাবে লাখ লাখ মেট্রিক টন মজুত করা ইরি-বোরো ও আউশ ধান এবং চাল বাজারে সরবরাহ শুরু হয়েছে। কারণ এক মাসের মধ্যেই ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। মজুত ধান বিক্রি না হলে তাদের লোকসান গুনতে হবে, সেজন্যেই চাল আকারে বাজারে সরবরাহ করছেন তারা। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কমে গেছে।
বাসদের নওগাঁর সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল জানান, সারা দেশে ৫০ জনের মতো ধান-চাল ব্যবসায়ী সারা দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থার কারণেই প্রতি বছর ধান কাটা-মাড়াইয়ের শুরুতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মিলার ও আড়তদাররা ধান কম দামে কিনে চাল মজুত করে। অপর দিকে ধান কাটা-মাড়াইয়ের শুরুতে কৃষকরা বাজারে ধানের ন্যায্যমূল্য পান না। সিপিবির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রেজা বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তবে সিন্ডিকেটের অভিযোগ অস্বীকার করে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, জেলায় আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হওয়ায় এবং সরকারের ওএমএস, ভিজিডি, বয়স্কভাতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় চালের দাম কমে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাসছুল ওয়াদুদ জানান, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় মাত্র তিন হেক্টর (২১ বিঘা) জমির ধান কাটা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় প্রায় ১ হাজার ১০০ চালকল থেকে প্রতি বছর ১৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উত্পাদন হয়ে থাকে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাকি ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল রাজধানীসহ সারা দেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম পাটোয়ারী এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সোহেল রানা,নওগাঁ