আশঙ্কা ছিল, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবিরে একবার করোনাভাইরাসের আক্রমণ শুরু হলে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে মারাত্মক; কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এই শিবিরগুলোর অবস্থা শহরের বস্তির অনুরূপ। এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থলগুলো। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত আশ্রিতের সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাও এসব রোহিঙ্গা শিবির। গত ২ অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনা মহামারী সংক্রমণ শনাক্তের হার ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বাংলাদেশের অথবা কেবল কক্সবাজার জেলার পরিস্থিতির সাথে তুলনা করা হলেও এ হার অনেক কম। মোটের ওপর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে এর সংক্রমণ আজো কেন কম, তার কারণ নির্ণয় করা দরকার।
একটি সহযোগী দৈনিক শুক্রবার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনহপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জুন মাসে তিনটি মডেল প্রকাশ করেন রোহিঙ্গা শিবিরে সংক্রমণ ঝুঁকির ব্যাপারে। এতে বলা হয়েছে, এক বছরে অন্তত চার লাখ ২১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা আক্রান্ত হতে পারেন কোভিড বা করোনায় আর প্রাণহানি ঘটতে পারে দুই সহস্রাধিকের। প্রথম ৩ মাসে সেখানে ২১২৭ জন আক্রান্ত হওয়ার পূর্বাভাসও দেয়া হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘প্রস্তুতি নেয়া’র পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি বাংলাদেশের যেসব জেলায় প্রথম করোনা সংক্রমিত হয়েছিল, সেগুলোর একটি হলো কক্সবাজার। তবে সেখানে রোহিঙ্গা শিবিরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বেশ কিছু দিন পরে, ৪ মে। কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোহিঙ্গাদের নমুনা পরীক্ষার কাজ চলছে। সিভিল সার্জন জানান, ২ অক্টোবর পর্যন্ত ১১ হাজার ৩৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭১ জনের করোনা ধরা পড়েছে। অর্থাৎ শনাক্তের হার ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনার বিস্তার দেশের অন্যদের চেয়ে অনেক কম হওয়ার কারণ সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি কিংবা এ ব্যাপারে পুরো ঐকমত্যও পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ এর কারণগুলো চিহ্নিত করা গেলে তা বাংলাদেশের কাজে লাগত বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) দফতরের মতে, যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া, সচেতনতা, এনজিও কার্যক্রমসহ চলাফেরা সীমিত করা প্রভৃতিসহ সতর্কতার দরুন রোহিঙ্গা শিবিরে করোনার বিস্তার তেমন ঘটতে পারেনি। দু’সপ্তাহের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে কমপক্ষে ১৯ হাজার রোহিঙ্গার। তাদের প্রত্যেক পরিবারের মধ্যে, মাথাপিছু দু’টি করে ছয় লাখ মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। এর সাথে সাবান-স্যানিটাইজার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়া হচ্ছে।
২ অক্টোবর পর্যন্ত উখিয়ার স্থানীয় লোকজনের ৪৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সে উপজেলার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২০৭। টেকনাফে স্থানীয় বাসিন্দাদের ৩৬৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হলেও এ উপজেলার আশ্রয় শিবিরগুলোতে ৬৪ জন রোহিঙ্গা আক্রান্ত হয়েছেন। গত মাস থেকে রোহিঙ্গাদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। উপরিউক্ত দু’উপজেলায় রোহিঙ্গার সংখ্যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রায় দ্বিগুণ।
জানা গেছে, ২ অক্টোবর পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষার হার দেশের অন্যদের চেয়ে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে কম। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, একজন রোগী শনাক্ত করার জন্য ১০-৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা পর্যাপ্ত। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ৪২টি নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে একজনকে শনাক্ত করার বিপরীতে। দেশের অন্যদের বেলায় এ সংখ্যা মাত্র পাঁচ। আরআরআরসি সূত্রের দাবি, আগে প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের ২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হতো। এখন তা ২০০ পৌঁছেছে, যা আরো বাড়বে।
আমরা আশা করি, নিছক ধারণা কিংবা অনুমান নয়, পর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের করোনা সংক্রমণ কম হওয়ার বিষয়ে। তা হলে এর নিরিখে বাংলাদেশসহ সবাই প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেয়া সম্ভব হবে।
ইরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি আধুনিক কালের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। বাহরাম কাসেমি বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের সংকটপূর্ণ এবং দুঃখজনক পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। মিয়ামনারের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে যে সব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে দেশটির সরকার তা মোটেও গ্রাহ্য করেনি। ফলে বিরাজমান পরিস্থিতি আধুনিক কালের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের অব্যাহত সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির কথা বলতে যেয়ে তিনি জানান, বিভিন্ন দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্ব জনমত হুঁশিয়ার, আহ্বান এবং আবেদন-নিবেদন উপেক্ষা করেছে মিয়ানমার সরকার। মিয়ানমার সরকারের এ আচরণকে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পাশাপাশি রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুঃখজনক পরিস্থিতি নিরসনে ইরানের তৎপরতার কথাও তুলে ধরে তিনি। এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব, মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপের কথা তুলে ধরেন বাহরাম কাসেমি। তেহরান এবং নিউইয়র্কে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করেছে তেহরান। ইরানের সংবাদ মাধ্যম দেশে-বিদেশে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ইরানের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ সব তৎপরতা চলছে বলে জানান তিনি।
শরণার্থীদের গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানবিক ভাবে সাড়া প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাতের প্রক্রিয়া বন্ধ করতে সব আন্তর্জাতিক এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া, রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য জরুরিভিত্তিতে আরো ত্রাণ পাঠানোর আহ্বানও জানান তিনি।
কিন্তু আমার কথা হচ্ছে আমরা চাই তারা তাদের নিজের ভূমিতে যেন ফিরে যায়। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয় _ এই নীতিতে আমাদের বাংলাদেশ বিশ্বাসী। আমাদের বর্তমান সরকার ও বিগত সরকার যে পররাষ্ট্রনীতি দিয়েছেন সেই নীতিমালা অনুসরণ করেই আমরা প্রত্যেক দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। কারও সাথে বৈরি সম্পর্ক হোক সেটা আমরা চাই না। সকলের সাথে বন্ধুত্ব নিয়েই আমরা থাকতে চাই মিয়ানমার সরকারকে আমি এইটুকু বলব যে, তাদের নাগরিক, শত শত বছর ধরে তারা বাস করছে। এক সময় তাদের ভোটের অধিকার ছিল।
তাদের সব ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া বা তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া বা তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা, এর ফলাফল ঠিক কী দাঁড়াতে পারে সেটা কি তারা চিন্তা করেছে? কেন তারা এ ধরনের কাজ করেছে??
( লেখকঃ মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার ।। বিশেষ প্রতিবেদক শ্যামল বাংলা ডট নেট ও শ্যামল বাংলা টিভি, আহবায়ক জাতীয় জনতা ফোরাম, সাবেক কাউন্সিলরঃ বিএফইউজে-বাংলাদেশ, সদস্য ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ( ডিইউজে))