ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে বৌ রেখে শালী নিয়ে উধাও হয়েছে এক স্বামী। এবার শাশুড়িকে নিয়ে উধাও হবার পালা মর্মে হুমকি প্রদান করছেন সেই জামাই! ঘটনাটি ঘটেছে ০৯/০৮/২০২০ তারিখ রবিবার রাত ৮টার দিকে কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর ইউনিয়নের জয়দিয়া গ্রামে। এব্যাপারে জয়দিয়া গ্রামের মৃত ওমর আলী মন্ডলের ছেলে ও মেয়ের পিতা মোঃ শাহাজান মন্ডল ঝিনাইদহ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ৭/৩০ ধারায় একটি মামলার আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কোটচাঁদপুর থানাকে মামলাটি এজাহার হিসাবে লিপিবদ্ধ করতে আদেশ দিয়েছেন। মামলা নং-ঘঞঈ/চ ১৫৮/২০। সে মোতাবেক কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহবুবুর রহমান মামলাটি এজাহার হিসাবে গন্য করে এসআই আনোয়ার হোসেনকে আইও হিসাবে মামলার তদন্ত দায়িত্ব প্রদাণ করেন। সরেজমিনে তদন্ত করে ও মামলা সুত্রে জানা গেছে, কোটচাঁদপুর উপজেলার লক্ষীকুন্ডু গ্রামের আক্কাচ মন্ডলের ছেলে আসামী মিলন হোসেন (২৬) মামলার বাদী শাহাজান মন্ডলের সেজ জামাই ও সেজ মেয়ে মরিয়মের স্বামী, জামায়ের ভাই আক্কাচ মন্ডলের ছেলে খোকা হোসেন (৩০), জামায়ের পিতা মৃত জহর আলীর ছেলে মোঃ আক্কাচ মন্ডল (৬০) ও জামায়ের মা আক্কাচ আলীর স্ত্রী মোছাঃ রুপভান বেগম (৫৫)। বাদীর সেজ কন্যা মরিয়মের সহিত আসামী মিলন হোসেনের বিগত অনুমান ৫ বৎসর পূর্বে বিবাহ হয়ে। বিবাহের পর তাদের কোনো সন্তান হয়নি।

বাদীর সেজ কন্যা মরিয়ম (২২) এর চেহারা খারাপ হওয়ার আসামীগন বাদীর সেজ কন্যাকে স্ত্রী/পুত্রবধু হিসাবে মানিয়া লইতে না পারিয়া বাদীর সেজ কন্যার উপর শারীরিক ও মানষিক ভাবে নির্যাতন করিত। ভিকটিম ও বাদীর ছোট ও নাবালিকা কন্যা মোছাঃ নাছরিন খাতুন (১৫) সাফদারপুর এস.বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। আসামী মিলন হোসেন বাদীর ছোট কন্যা ভিকটিম নাছরিন খাতুনকে প্রায়ই উক্ত্যাক্ত করিত। বাদীর কন্যা বিষয়টি বাদীকে জানাইলে বাদী অন্যান্য আসামীদের বিষয়টি অবহিত করে। কিন্তু অন্যান্য আসামীগন বাদীর কথায়া কর্নপাত না করিয়া বাদীকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকী দিয়া বাদিকে তাড়াইয়া দেয়।

বিষয়টি জানতে পেরে আসামী মিলন আরো বেপরোয়া হইয়া ওঠে এবং অন্যান্য আসামী তার পিতা, মাতা, ভাই ও অন্যান্যদের যোগসাজসে বাদীর ছোট কন্যা নাছরিন খাতুনকে অপহরণ করিবার হুমকি প্রদান ও পরিকল্পনা করে। একপর্যায়ে আসামীর হুমকীর কারনে বাদীর কন্যার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এমতাবস্থা চলাকালে ঘটনার দিন তারিখ ও সময়ে বাদীর কন্যা নিজ বাড়ীতে অবস্থান করাকালীন সময় ২নং আসামী খোকা হোসেন নাবালিকা কন্যাকে ঘর থেকে ডেকে বাহিরে আনা মাত্রই পূর্ব হইতে ওৎ পেতে থাকা ১নং মিলন হোসেন আন্যান্য আসামীদের সহায়তায় বাদীর কন্যাকে জোর পূর্বক অপহরন করিয়া তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটি সাদা রং এর মাইক্রো যোগে কোটচাঁদপুর শহরের দিকে চলিয়া যায়। বাদীর কন্যা আসামীদের সহিত ধস্তাধস্তি ও ডাক চিৎকারের একপর্যায়ে জয়দিয়া গ্রামের স্থানীয় স্বাক্ষীগন মজনু মন্ডলের ছেলে আঃ রাজ্জাক, ওমর আলীর মেয়ে মোছাঃ সাবিনা খাতুন, মোজাম মন্ডলের ছেলে নাজিম উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার বসন্তপুর গ্রামের বিশারত মন্ডলের ছেলে রকিজুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা আগাইয়া এসে দেখে যে, আসামীগণ বাদীর কন্যাকে মাইক্রো যোগে অপহরণ করিয়া কোটচাঁদপুরের দিকে লইয়া যাইতেছে। বাদী ও স্বক্ষীদের ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন আসিয়া বাদীর কন্যাকে খোঁজাখুঁজি করিতে থাকে। বাদী ও স্বাক্ষীগন বাদীর কন্যার ভবিষ্যত জীবনের কথা চিন্তা করিয়া ও সামাজিক মান সম্মানের কথা চিন্তা করিয়া অনেক খোঁজাখুঁজি করিতে থাকে।

বাদীর কন্যাকে কোথাও খুঁজে না পাওয়ায় বাদীর ধারনা অসামীগন তাহার কন্যাকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন অনৈতিক কাজে ব্যবহার করিতে পারে অথবা তাহাকে কোথাও বিক্রয় করিয়া অথবা পাচার করিয়া দিতে পারে বা জোর পূর্বক বিবাহ করিতে পারে। বিষয়টি লইয়া বাদির আতœীয় স্বজনদের সাথে আলোচনা করিয়া বাদীর কন্যাকে কোথাও না পাইয়া সর্বশেষ গত ইং-১২/০৮/২০২০ তারিখে কোটচাঁদপুর থানায় মামলা করিতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ করিতে অনিহা প্রকাশ করায় বিজ্ঞ আদালতে মামলা দাখিল করে। মামলায় বাদি আরো উল্লেখ্য করে বলেন অসামীগন বাদীর ছোটকন্যা ভিকটিমকে অপহরন করিয়া লইয়া যাওয়ায় আসামী মিলন হোসেনের স্ত্রী ও বাদীর সেজ কন্যা ক্ষোভে অপমানে বিষ পান করিয়া আতœহত্যার চেষ্টা করিয়াছে। বর্তমানে বাদীর সেজ কন্যা মৃত্যুর সহিত পাঞ্জা লড়িতেছে মর্মে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলা দাখিল হওয়ার প্রায় এক মাস পরে ৭ই অক্টোবর আসামিরা সুকৌশলে ভিকটিম নাসরিনকে কোটচাঁদপুর থানায় আত্মসমর্পণ করলে কোটচাঁদপুর থানার আইও এসআই আনোয়ার হোসেনের নিকটে আত্মসমর্পণ করায়। কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ ভিকটিক নাসরিনকে কোট হাজতে প্রেরণ করে। ৭ই অক্টোবর ঝিনাইদহ আদালতে জবান বন্দিতে ভিকটিম নাসরিন আসামিদের হুমকির কারনে ভয়ে স্ব-ইচ্ছায় পালিয়েছে মর্মে কোর্টে জবানবন্দি প্রদান করে। পরে বিজ্ঞ আদালত ভিকটিম নাসরিনকে তার পিতার জিম্মায় মুক্তি প্রদাণ করেন। এদিকে উদ্ধারের পর ভিকটিম নাসরিন বাড়িতে এসে তার পিতা শাজাহানকে জানায় ৮ই অক্টোবর ঘটনার দিন রাতে জয়দিয়া গ্রামে নিজেদের বাসার পাশের পিয়ারা বাগানে প্রথমে আসামি খোকা ডেকে নিয়ে গেলে মজনুর ছেলে রাজ্জাক (৩০) ও রাজ্জাকের স্ত্রী বিলকিস বেগম (২৫) এর সহযোগিতা আসামী মিলন হোসেন, খোকা হোসেন, আক্কাচ মন্ডল,আক্কাচ আলীর স্ত্রী রুপভান বেগম পাশের পিয়ারা বাগানে গেলে ভিকটিমের মুখ বেধে একটু দুরে নিয়ে গাড়িতে তুলে খালিশপুরে নিয়ে ঘুরে আবার বলুহর ইউনিয়নের সিংগা গ্রামে ৪দিন রেখে ঘুমির বড়ি খাইয়ে মুখ বেধে রেখে দেই আর তিনটি বুলেট সহ পিস্তল ও চা পাতির ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। নচেৎ তোকে ও তোর পরিবারকে হত্যা করা হবে মর্মে ভয় দেখিয়ে লক্ষীকুন্ডু গ্রামে নিয়ে মৃত. ছন্নত মন্ডলের ছেলে আশার বাড়িতে রাখে ২দিন পরে আরেক জনের সহযোগিতায় ঢাকায় নিয়ে রাখে ৩দিন।

২৪শে অক্টোবর আসামী মিলন হোসেন, খোকা হোসেন, আক্কাচ মন্ডল,আক্কাচ আলীর স্ত্রী রুপভান বেগম ঝিনাইদহ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিজ্ঞ আদালত আসামি মিলনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ প্রধাণ করেন আর বাকি আসামিদের জামিন প্রদাণ করেন। এঘটনায় ভিকিটিম নাসরিনের পিতা শাজাহান তার বাড়ির পাশের অপহরণে সহযোগিতাকারি মজনুর ছেলে ভাতিজা রাজ্জাক ও রাজ্জাকের স্ত্রী বিলকিস বেগম সহ বাকি আসামিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন এখনও আসামি মিলন ও তার পরিবারের লোকজন হুমকি দিয়ে বলছে এবার শাশুড়ির পালা! শাশুড়িকেউ এবার উধাও করা হবে মর্মে প্রতিনিয়ত হুমকি প্রদান করছে তারা।