দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং তাঁর স্বামী মো. মেজবাউল হোসেনকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।গত বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে বিষয়টি আজ শনিবার গণমাধ্যমের নজরে আসে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে রংপুরের পীরগঞ্জে ইউএনও হিসেবে কর্মরত তাঁর স্বামী মো. মেজবাউল হোসেনকে ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।’ওয়াহিদা খানম ৩১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তাঁর স্বামী মেজবাউল হোসেনও একই ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।
গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর চিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা তাঁর বাবা ওমর আলী শেখ ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও জখম করে। পরে কোয়ার্টারের অন্য বাসিন্দারা তাঁদের চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনা হয়। রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন।
এ ঘটনায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বড় ভাই শেখ আরিফ হোসেন বাদী হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।এ মামলায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও মোট চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে আসামি নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমারকে রিমান্ড শেষে গত ১১ সেপ্টেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয় উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও মামলার আসামি আসাদুল হককে।
তবে এই মামলার মোড় ঘুরে যায় রবিউল ইসলামের গ্রেপ্তারের পর। গত ৯ সেপ্টেম্বর তাকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। তিনি এখন দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে রয়েছেন। রবিউল ইউএনও ওয়াহিদার কার্যালয়ে মালি হিসেবে কাজ করতেন। ইউএনওর ব্যাগ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে গত জানুয়ারি মাসে তিনি বরখাস্ত হন।
রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ দাবি করেছে, এ ঘটনার তিনিই একমাত্র পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারী। আক্রোশ থেকেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, লাঠি, মই, চাবিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর পরনের প্যান্ট, হাতের ছাপসহ মোবাইলের লোকেশনের তথ্য আলামত হিসেবে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব আলামত বিচারকাজে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।