প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশন করা শিখতে কোনো কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে না। মঙ্গলবার দুপুরে (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এক হাজার কর্মকর্তাকে খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশন শিখতে বিদেশে পাঠাচ্ছি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, তা পুরোপুরি অসত্য। এ সংবাদের মাধ্যমে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। যেসব গণমাধ্যম এ বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করেছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, এ ধরনের একটি সংবাদ গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত হয়েছে। আজ আবার বিভিন্ন পত্রিকায়ও একই সংবাদ দেখলাম। গতকাল থেকেই আমরা এ নিয়ে বিভিন্নজনের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি। এ ধরনের সংবাদের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুপুরে রান্না করা খাবার পরিবেশন করতে এরই মধ্যে সরকার ‘জাতীয় মিড-ডে-মিল’ নীতিমালা অনুমোদন করেছে। এ নীতিমালার আওতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুপুরের খাবার বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ, বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, শ্রেণিকক্ষে ধরে রাখা এবং তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে। এ জন্যই আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বাস্তবায়নের অর্থ চেয়ে একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে যেকোনো প্রকল্প নেয়ার সময় ওই বিষয়ে কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন বা অভিজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের একটি বিষয় উল্লেখ থাকে। এটি যেকোনো প্রকল্প বা কর্মসূচির একটি রীতি। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ প্রকল্পে বিদেশ সফর করে অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজন হবে বলে আমার মনে হয় না। অধিদপ্তরেরও এ ধরনের কোনো প্রস্তাব পেশ করার কথা নয়। তা ছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য কর্মকর্তা পাঠানোর প্রয়োজন হলে অধিদপ্তর অবশ্যই আমাদের সঙ্গে আলোচনা করত।
এদিকে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুল শিক্ষার্থীদের রান্না করা সবজি খিচুড়ি বা ডিম খিচুড়ি সরবরাহের কাজে এক হাজার জন সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে চায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। মূলত বিভিন্ন দেশের স্কুলগুলোতে বাজার থেকে শুরু করে রান্না করা এবং কীভাবে তা শিক্ষার্থীদের বিতরণ করা তা দেখতেই বিদেশ ভ্রমণের আয়োজন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এ কাজে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মকর্তা ছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন বিভাগের কর্মকর্তাদের এ বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাবিত ‘প্রাইমারি স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম’-এ পাঁচ কোটি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। খিচুড়ি রান্না করতে শুধু বিদেশ প্রশিক্ষণই নয়, স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রস্তাবিত প্রাইমারি স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম এর আওতায় এ প্রশিক্ষণের আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। বিশাল ব্যায়ের এ কর্মসূচির আওতায় আগামী পাঁচ বছর দেশের ৫০৯টি উপজেলায় এক কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থীদের মাঝে তিন দিন গরম খিচুরি এবং তিন দিন পুষ্টিকর বিস্কুট সরবরাহ করা হবে। প্রস্তাবিত কর্মসূচি থেকে বিদেশে প্রশিক্ষণ বাদ দিতে চায় কমিশন। এছাড়া স্থানীয় প্রশিক্ষণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ব্যাখ্যা চেয়েছে কমিশন। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টিকর বিস্কুট ও গরম খাবার বিতরণ দেশে নতুন নয়। এ কাজ আগে থেকে করে আসছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।