উত্তাল ¯্রােতের তান্ডবে টাল-মাটাল নিজামপুর বেড়িবাঁধ। যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। কলাপাড়ায় মহিপুরের নিজামপুর গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধটি নির্মান কাজ শেষ হওয়ার মাত্র এক বছর না যেতেই ভাঙ্গতে শুরু করেছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমা কিংবা জোয়ারে আন্ধারমানিক নদীর খর¯্রােতা উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে বারবার এ বাঁধের উপর। প্রতিনিয়তই ভাঙ্গছে বাঁধটি। ফলে হাজার হাজার মানুষ পুন:রায় পানিবন্দি ও আর্থিক ক্ষতির শংকায় রয়েছে। গত কিছুদিনের অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডব জুড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্নিঝড় সিডরে মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের পাউবো’র ৪৭/১ পোল্ডারের বেরিবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এর পর ২০০৮ ঘূর্নিঝড় নার্গিস, ২০০৯ আইলা, ২০১৩ মহাসেন, ২০১৫ কোমেন, ২০১৬ রোয়ানু, ২০১৭ মোরা, ২০১৯ ফণী ও বুলবুল এর তান্ডবে নিজামপুর বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বেশ কয়েকবার সংস্কারসহ তিন-তিনবার পূন:নির্মান হলেও সাগর মোহনা আন্ধারমানিক নদীর অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ারে পানি ভাঙ্গন কবলিত অংশ দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। দফায় দফায় প্লাবিত হয় ওই ইউনিয়নের পুরান মহিপুর, ইউসুফপুর, নিজামপুর, কোমরপুর ও সুধিরপুর গ্রামের বসতবাড়ি ঘরসহ অন্তত: তিন হাজার একর ফসলি জমি। দীর্ঘ ১২ বছরেও কাঙ্খিত ফসল পায়নি কৃষকরা। এছাড়া বন্ধ হয়ে যায় বাঁধ সংশ্লিষ্ট একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে নদী ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ করে দেয় রিং বেরিবাঁধ। সবশেষ এ বছর আম্ফান ও গত কিছুদিনের অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডবে বাঁধটির বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে কৃষক আ: খালেক বলেন, এখানে আমাদের অনেক চাষের জমি ছিল। সব গিলে খেয়েছে এই নদী। এই বাঁধটি ছুটে গেলে এবার আর যাওয়ার কোন জায়গা থাকবেনা। একই আরেক কৃষক বারেক হাওলাদার বলেন, আন্ধারমানিক নদীর জোয়ারের তান্ডবে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। নদীর পানির চাপ বাড়ার সাথে সাথে বাঁধটি চরম হুমকী ও ঝুকির মধ্যে রয়েছে।
নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা জালাল মিয়া বলেন, সিডরের পর থেকে কয়েক গ্রামের মানুষ দশ বছর যাবৎ জমিতে কোন চাষ করতে পারিনি। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগনের দূর্ভোগ লাগবে এখানে রিং বেরিবাঁধ করে দেয়। কিন্তু আন্দারমানিক নদীর কয়েক দিনের অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডবে এ বাঁধটি আবারো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এবার চাষ শুরু করার পর এখন আবার নতুন করে আতঙ্কে ভুগছি।
মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ: ছালাম আকন বলেন, এলাকার বেশিরভাগ মানুষই মৎসজীবী অনেকেউ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুধু অমাবস্যা-পূর্ণিমাই নয়, জোয়ার ভাটার সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হয় এখানকার মানুষের। পূর্বের বেবিবাঁধ নেই। এখানে সাড়ে আটশ মিটার রিং বেরিবাঁধ হয়েছে। তাও আবার আম্ফান ও অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডবে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্বারে দ্বারে গিয়ে অনেক বার ঘুরেছি। অবহেলিত এ জনপদের নিজামপুর গ্রামের তিন কিলোমিটার বেরিবাঁধ নতুনভাবে করার জন্য তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কলাপাড়া পানি উন্নয়নবোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো:ওয়ালিউজ্জামান বলেন, নিজামপুরের রিং বেরিবাঁধটি সরজমিনে পরিদর্শন করেছি। যে বরাদ্ধ দেয়া হয় তা দিয়ে কোন রকমের কাজ করা সম্ভব। সাগর মোহনায় পুর্নাঙ্গ বেরিবাঁধ করা প্রয়োজন। এজন্য প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রনালয় পাঠানো হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি