গরুচোর সন্দেহে কক্সবাজারের চকরিয়ায় এক রশিতে বেঁধে নির্যাতনের পর মা-মেয়েকে স্থানীয় জনতা ও ইউপি চেয়ারম্যান পুলিশে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুরে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি শুক্রবার ঘটলেও পরে রশিতে বাঁধা অবস্থায় মা- মেয়েকে ওই এলাকায় ঘোরানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ পায়।
তবে চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার এলাকার স্থানীয় জনতা নারীসহ পাঁচ গরুচোরকে হাতেনাতে আটক করে। পরে আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসে। তখন আমি এলাকায় ছিলাম না। আমাকে আমার এলাকার লোকজন ফোন করলে আমি চকরিয়া থানার পুলিশকে ফোনে বিষয়টি অবহিত করি। তখন পুলিশ আমার কার্যালয়ে এসে তাদের নিয়ে যায়। তাদের আমি কোনোভাবে নির্যাতন করিনি। তাদের সঙ্গে আমার দেখাও হয়নি।
এ বিষয়ে চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, নারীসহ গরুচোর সিন্ডিকেটের পাঁচ সদস্যকে এক কিলোমিটার ধাওয়া করে স্থানীয় জনতা আটকের খবরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। সে সময় দুই নারী ও তিন পুরুষ সদস্যকে স্থানীয় ইউপি কার্যালয় থেকে আটক করা হয়। তাদের প্রথমে চকরিয়া হাসপাতাল ও পরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে মা-মেয়েসহ চার জনের বাড়ি পটিয়ার শান্তির হাটে। অপরজনের বাড়ি পেকুয়া উপজেলার লালব্রিজ এলাকায়।
চোর সন্দেহে কোনও নারীকে এভাবে নির্যাতন করতে পারে কিনা? ফোনে জানতে চাইলে ওসি মিজানুর রহমান বলেন, এভাবে রশি বেঁধে নির্যাতন করে পাড়া-মহল্লায় ঘোরানোর বিষয়টি প্রথম অবস্থায় আমরা জানতে পারিনি। এছাড়া নির্যাতনের বিষয়ে গ্রেফতার আসামিরাও অভিযোগ করেনি। বরং তারা যে গরু চুরি করতে এলাকায় এসেছিল, সেটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। শুধু বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউপি কার্যালয় থেকে পুলিশ তাদের নিয়ে এসেছে। পরে নির্যাতনের একটি ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব সহকারে নেয়।
ওসির কাছে মামলার তথ্য জানতে চাইলে তিনি থানার বাইরে রয়েছেন বলে জানান। একঘন্টা পর বাদীর নাম, মামলা নং ও আসামিদের পরিচয় দেওয়ার কথা বলে ফোন কেটে দেন ওসি। পরে এক ঘণ্টা পর এ প্রতিবেদক চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান ও ওসি হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
তবে এ প্রতিবেদক একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হন, এ মামলার বাদীর নাম মাহবুবুল আলম। তার বাড়ি চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাদা এলাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, গরু চোর সন্দেহে প্রথমে স্থানীয়রা একদফা মা-মেয়ের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। পরে হারবাং ইউপি ও গ্রাম পুলিশ মা-মেয়েকে এক রশিতে বেঁধে টেনে-হেঁচড়ে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে এসে পুনরায় নির্যাতন করে। নানা নির্যাতনের পর ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন করে পুলিশ আনেন। এরপর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে । রোববার ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার স্থানীয় লোকজন ফাঁড়ি পুলিশকে খবরটি দেন। এরপর মা- মেয়েকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় এক ব্যক্তি গরু চুরির অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করলে শনিবার জেলহাজতে পাঠানো হয় তাঁদের।