গাজীপুরে অগ্রীম বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ, ঈদের ছুটি বৃদ্ধি এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবীতে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা শনিবার বিক্ষোভ করেছে। তারা মহাসড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাংচুর করেছে। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েকদফা সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এসময় এএসপি ইন্সপেক্টরসহ শিল্প পুলিশের অন্ততঃ ৭জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সর্টগানের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার সেল ছুড়েছে। এদিকে অপর এক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও এক কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন ও শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাতাইশ এলাকার ভিয়েলা টেক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে ঈদ বোনাস, বাৎসরিক ছুটির টাকা ও চলতি জুলাইয়ের পুরো মাসের বেতন আগামী সোমবারের মধ্যে (২৬জুলাই) অগ্রীম পরিশোধ এবং ঈদ উপলক্ষ্যে ১২দিন ছুটি প্রদানের দাবী জানিয়ে আসছিল। ঈদ উপলক্ষে সরকার ঘোষিত ১৫ দিনের বেতন এবং ৩ দিন ছুটি ঘোষণাকে না মেনে শ্রমিকরা একটি মহলের ইন্ধনে অযৌক্তিকভাবে এসব দাবী করতে থাকে। এসব দাবীতে শ্রমিকরা গত বৃহষ্পতিবার কারখানায় কর্মবিরতি, বিক্ষোভ করে। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ ঈদের ছুটি ৮দিন (৩১ জুলাই হতে ৭ আগস্ট) এবং ঈদবোনাস ও আগামী ৩০ জুলাই চলতি মাসের ১৫দিনের বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ওই ঘোষণা প্রত্যাখান করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। তারা কয়েক কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত ও ভাংচুর করে। একপর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে পরে কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি সিদ্দিকুর রহমান জানান, শনিবার সকালে শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কারখানায় এসে জড়ো হতে থাকে। তারা গেইটে তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকরা বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া, ঈদ বোনাস ও অগ্রীম বেতন পরিশোধ এবং ছুটি বাড়ানোর দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের মহাসড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে শ্রমিকরা ইট পাথর ছুড়তে থাকে। এতে শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের এএসপি শামসুল আলম ও ইন্সপেক্টর রেজ্জাকুল হায়দারসহ পুলিশের অন্ততঃ ৭জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ৪১ রাউন্ড সর্টগানের গুলি (সর্ট সেল), ৭টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৪১ রাউন্ড টিয়ার সেল (লং সেল) ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে মহাসড়কে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। আহত পুলিশ সদস্যেদের হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানায়, পুলিশ বিনা উস্কানিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদেও উপর হামলা চালিয়েছে। এতে অন্ততঃ ১২ শ্রমিক ও পথচারী আহত হয়েছে।
কারখানার মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক কর্মচারীরা অফিস কারখানা ঘেরাও করে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে দাবী দাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক বল প্রয়োগ, কর্মকর্তাদের মারধর, ভাংচুর, বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ এবং কারখানার কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা প্রদান করে। এসব কারনে নিরাপত্তার স্বার্থে শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে গাজীপুরের অপর এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়াসহ দেড়শ’ ভাগ ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির দাবীতে কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। এসময় শ্রমিকদের মারধরে কারখানার উপ ব্যবস্থাপক আহত হয়েছেন।
কারখানার উপ ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা এলাকাস্থিত শফি টেক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কোন বকেয়া পাওনা নেই। তাদের সকল পাওনাদি নির্ধারিত সময়েই পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গত ঈদুল ফিতরের ৫০ ভাগ বোনাস শ্রমিকদের পরিশোধ করা হয়েছে।
অথচ শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে গত ঈদুল ফিতরের অবশিষ্ট ৫০ভাগ ও আসন্ন ঈদুল আযহার শতভাগসহ মোট দেড়শ’ ভাগ ঈদ বোনাস এবং বাৎসরিক ছুটির টাকার দাবী অযৌক্তিভাবে জানিয়ে আসছিল। শ্রমিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ আসন্ন ঈদুল আযহার শতভাগ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ওই ঘোষণা প্রত্যাখান করে শ্রমিকরা।
শিল্প পুলিশের এসআই সুব্রত দেব ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকালে কারখানায় কারখানায় এসে জড়ো হয়। তারা কারখানায় প্রবেশ করে মেইন গেইট তালাবদ্ধ করে দেয়। এসময় তারা দেড়শ’ভাগ ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির টাকা পরিশোধের দাবীতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে এবং কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে তারা কারখানার উপ ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমানকে মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও গেইট তালাবদ্ধ থাকায় ভিতরে প্রবেশ করতে পারে নি। একপর্যায়ে পুলিশ কৌশলে কারখানার ভিতরে প্রবেশ করে এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। বৈঠকে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবী সমূহ মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করে কাজে যোগ দেয়।