দেখে মনে হবে আশি বছরের অধিক বয়স। খিটখিটে, শরীরের সবকটি রগ যেনো ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। ঝুলে গেছে শরীরের চামড়া। অথচ কদিন আগে যে ছেলেটির চোখে মুখে তারুণ্যের উচ্ছলতা ছিল, পড়াশোনা করে বড়ো হবার একগুচ্ছ স্বপ্ন নিয়ে যে ছেলেটি পড়ার টেবিল আর স্কুলে ছুটে যেতো রোজ, আজ তার শরীরে বাসা বেধেছে মরণব্যাধি লিভার ক্যান্সার। আমি বাঁচতে চাই ফিরে পেতে চাই হারিয়ে যাওয়া সোনালী দিন, ফিরে যেতে চাই বাবা-মার কোলে আগের মতো। এই দুঃস্বপ্নময়ে আতœচিৎকার হয়েছে তার নিত্যদিনের সঙ্গী। নির্ঘুম সারাটি রাত পেটের ব্যাথায় কাতর, ছেলের এমন অনিশ্চয়তাময় জীবনে বাবা-মা হয়েছেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বলছিলাম মরণব্যাধি লিভার ক্যান্সারে অক্রান্ত রাসেলের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে এমন হৃদয় বিদারক আকুতি মিনতির কথা।
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় ২নং ওয়ার্ড পিড়লডাঙ্গা গ্রামের এমরান হোসেনের ছেলে রাসেল (১৬) বছর। প্রয় ১ বছর আগে হঠাত পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হলে পার্শবর্তী জেলা জয়পুরহাটে পদ্মা ল্যাবে ভর্তি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, লিভারে পানি জমেছে। সেখানে ডাক্তারের দেওয়া ওষুধে কোন কাজ না হওয়ায় কিছুদিন পর লিভারে জমে থাকা পানি অপারেশনের জন্য ছেলেকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হলে ডাক্তার বোর্ড বসিয়ে বিভিন্ন পরিক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বলেন লিভারে অতিরিক্ত চর্বির সাথে রক্ত জমেছে। অপারেশন করতে হবে, অনেক টাকা লাগবে। কথামতো অতিরিক্ত চর্বি কিছু তাজা রক্ত বের করার কিছুদিন পর ছেলের কোন উন্নতি না হওয়ায় ফিরে আসেন বাড়ি। রাছেলের রোগ মুক্তির জন্য এভাবে অসহায়ের মত ছুটতে ছুটতে তার পরিবার এখন ক্লান্ত।
ছেলের জন্য অর্থ যোগান দিতে গিয়ে নিজের যতটুকু জমিজমা ছিল বিক্রি করে এখন হয়েছেন নিঃস্ব। কিছুদিন পর অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে আবার ছুটে যান বগুড়া পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অপারগতা প্রকাশ করলে শেষবারের মতো ঘরে থাকা কিছু ধান, চাল, ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকার সখের এমাত্র গাভী মাত্র ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে ছেলেকে নিয়ে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল হসপিটালে ভর্তি হন। রাসেলকে পরিক্ষা করে ডাক্তার বলেন অপারেশনের জন্য ৩ লক্ষ টাকা লাগবে। নিরুপাই বাবা ছেলেকে নিয়ে এক বছর ধরে এখানে সেখানে ঘুরতে ঘুরতে জমিজমা হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। অর্থের অভাবে চোখের সামনে সন্তানের এমন মৃত্যু যন্ত্রনা দেখে অর্থের খোঁজে কিংকর্তব্যবিমূঢ় বাবা-মা পাগলের মত ছুটে চলেছেন এর ওর বাড়ি।
এ সময় অসুস্থ রাসেল মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা আমি বাঁচতে চাই। লেখা পড়া করে বড়ো হতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে বলো তিনিতো মায়ের মতো। তিনি আমার জন্য কিছু একটা করুক, আমি বাঁচতে চাই। লেখা পড়া করে বড়ো হতে চাই।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ছেলের এমন হৃদয় বিদারক আকুতি মিনতিতে মা কহিনুর বেগম বিচলিত হয়ে পরেন। তিনি বলেন, আমার ছলটাকে বাঁচান ভাই। শরীরের সব রক্ত বেঁচে দিমো তাও ছলটা ভালো হক। ডাক্তারোক টাকা দিতে দিতে ফকির হয়ে গেছি।
পিতা এমরান হোসেন বলেন, ছলটার পিছনে সব টাকা শেষ করেছি ভাই, জমিজমা, গরু-বাছুর সব শেষ। তাও ছলটা ভালো হলোনা। তিনি আরো বলেন, ডাক্তার বলিছে ৫ লাখ টাকা দিলে ছলটার চিকিৎসা হবে, এতো টাকা কোটে পামো। প্রধানমন্ত্রী যদি এনা দয়ার দৃষ্টিতে তাকালো হিনি তাহলে ছলটা মোর বাঁচলো হিনি।