ইতিবাচক চিন্তা সবসময় আমাদের ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে।পক্ষান্তরে নেতিবাচক চিন্তা আমাদের খারাপ কাজে নিয়োজিত করে। ইতিবাচক হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্যপ্রাত্যহিক জীবনে ইতিবাচক চিন্তা ও কাজেরচর্চা করা আবশ্যক। একটা জিনিস মনে রাখাখুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো : চিন্তা থেকে কাজ,কাজ থেকে অভ্যাস,অভ্যাস থেকে স্বভাব, স্বভাব থেকে চরিত্র।
সুতরাং ইতিবাচক হতে হলে নেতিবাচক চিন্তা একদম বাদ দিয়ে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে।ইতিবাচক চিন্তা, কাজ, অভ্যাসওস্বভাব ধারাবাহিকভাবে আপনাকে উত্তম চরিত্রবান এবং ইতিবাচক একজন মানুষে পরিনত করবে।
ইতিবাচক হয়ে উঠার জন্য কিছু উপায়:
১.নিজেরভিতর ইতিবাচক চেতনাবোধ তৈরী করুন :মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৎকর্মের আদেশ দিয়েছেন এবং অসৎকর্ম থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। সুতরাং একজনসৎ মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য নিজের মধ্যে সবসময় একটি ইতিবাচক চেতনাবোধ তৈরীকরা খুবই প্রয়োজন।
২. নিজেরউপরআত্মবিশ্বাসওআস্থাবৃদ্ধিকরুন : আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে-নিজের ভিতর এই আত্মবিশ্বাস তৈরী করতে হবে। প্রত্যেকটি আবিষ্কারই জয়ের আগে মানুষের কাছে অসাধ্য ছিল।ইচ্ছাশক্তিও আত্মবিশ্বাস মানুষকে ইতিবাচক হওয়ার প্রেরণা যোগায়।
৩. অহংকারবাদ দিয়ে বিনয়ী হোন : জীবনে চলার পথে আপনার মতো সমপরিমাণ সুযোগ ও অর্জন আরেকজননাও পেতে পারে। এসব নিয়ে নিজের ভিতর অহংকার তৈরী করলে আপনি নেতিবাচক মানুষে পরিণত হয়ে উঠবেন। আপনার আজকের ভালো অবস্থান আগামী দিন নাও থাকতে পারে। সুতরাংঅহংকার ভুলে বিনয়ী হয়ে উঠুন, যা আপনাকে ইতিবাচক থাকার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিওএনে দিবে।
৪. ইতিবাচক কাজে ব্যস্ত থাকুন : কথায় বলে-“অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”। নিজেকে সবসময় ইতিবাচককাজে ব্যস্ত রাখুন। ব্যস্ততা আপনাকে নেতিবাচক চিন্তা ও কাজ থেকে দুরে রাখবে।
৫. শুরুতেইকাজের ফলাফল নিয়ে ভাবনা বন্ধ করুন :যে কোন কাজমনোযোগ দিয়ে শুরু করুন এবং ভালোভাবে শেষ করার জন্য লেগে থাকুন।শুরুতেই ব্যর্থতার চিন্তা আপনাকে দিন শেষে একজননেতিবাচকও ব্যর্থ মানুষে পরিনত করতে পারে।
৬. কৃতজ্ঞতাপ্রকাশ করুন :জীবনে চলার পথে কারো সামান্যতম অবদানকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করুন। সম্ভব হলেউপকারীর দু:সময়ে তাকে সাহায্য করুন। উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও সাহায্যের মনোভাব আপনাকে ইতিবাচক মানুষে পরিনত করবে।
৭. প্রতিহিংসা পরায়ণতা বর্জন করুন : প্রতিহিংসা পরায়ণতা মানুষের মনেনেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করে এবং ব্যক্তি জীবনকে অসুখী করে তোলে। সুতরাং প্রতিহিংসা করা বাদ দিন। অন্যের ক্ষতি করতে যেয়ে আপনি নিজেই বিপদে পড়ে যেতে পারেন।
৮. অন্যের কাজে সমালোচনা করা থেকে দুরে থাকুন : অন্যের কাজেরসমালোচনা করা এবং গীবত তৈরী করা-এসব বাদ দিন। এটি আপনাকে সবার কাছে অপ্রিয় করে তুলবে। নিজের কাজ নিয়েইব্যস্ত থাকুন।কারো প্রতি অভিযোগ করা বন্ধ করুন। আপনাকে নিয়ে কেউ অহেতুক গসিপ তৈরী করলে সেটি মাথা থেকে বাদ দিয়ে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকুন।
৯. আত্ম-সমালোচনা ও নিজের ভুল স্বীকার করুন : আপনি সব সময় সঠিক কাজ করছেন-এরকম নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে গঠনমূলক সমালোচনাকে ইতিবাচকদৃষ্টিভঙ্গিতে দেখুন।নিজের ভুল ও ক্ষমা স্বীকার মানুষকে আত্মশুদ্ধির পথ দেখায়। নিজেকে ভবিষ্যতের জন্যসংশোধন করে নিন।
১০. জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করুন :জ্ঞান অর্জনের কোন শেষ নেই।জ্ঞান অর্জন করার ফলে মানুষ আপনার কাছ থেকেনতুন নতুন বিষয়ে জানতে পারবে। অধিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজের সৃজনশীলতাকে আপনি বেশী বেশী কাজে লাগাতে পারবেন। এর ফলে দিনের পর দিন আপনি আরও বেশী ইতিবাচক হয়ে উঠবেন।
১১. অন্যকে যথাযথ সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করুন :প্রত্যেকটা মানুষই তার অবস্থান অনুযায়ী অন্যের কাছ থেকে যথাযথ সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়ার আশা পোষন করেন।আপনি যতটুকু সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করবেন,ঠিক ততটুকু সম্মান ও ভালোবাসা আপনি ফেরত পাবেন।ভয় ও সম্মান এক জিনিস নয়। সম্মান ও ভালোবাসা জোর করে পাওয়া যায় না।প্রকৃত সম্মান ও ভালোবাসা হৃদয়ের ভিতর থেকে আসে।এটা অর্জন করার বিষয়।
১২. আত্মনিয়ন্ত্রণ করা শিখুন :ইতিবাচক হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা হলো মানুষের মন মন্দ যা কিছু চায়-তাকে বাঁধা দিতে না পারা, বাঁধা দিতে না শেখা। কেউ যদি তার ইচ্ছাকে নিজ প্রবৃত্তির কাছে মন্দ ভাবে ছেড়ে দেন, তাহলে তার পতন অনিবার্য।নিজের রাগ, আবেগ, হতাশা, ভয় এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন।
১৩. দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন :দুশ্চিন্তা এমনিতেই চলে আসে। তবুও চেষ্টার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যখনকার সমস্যা তখন ভেবে সমাধান করা যাবে। সুতরাং আগাম দুশ্চিন্তা একদম বাদ দিয়ে দিন। এতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
১৪. নিজের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়ে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন: কোন মানুষই নিখুঁত নয়। সবারই কোন না দূর্বলতা আছে।নিজের দূর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়ে নিজের যা কিছু আছে তাতেই সন্তষ্ট থাকুন।অতিরিক্ত আকাঙ্খা আপনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক শান্তি বিনষ্ট করবে এবং আপনাকে ক্রমান্বয়ে অসৎ করে তুলবে।জীবনে ঘটে যাওয়া সবকিছু স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন। মন্দ অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমান সময়ের সদ্ব্যবহার করুন। ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী হউন।
১৫. ইতিবাচক মানুষের সাথে মিশুন এবং সততা বজায় রাখুন :আপনার চারিপাশ ইতিবাচক মানুষ দিয়ে ঘিরে ফেলুন। নেতিবাচক মানুষের সাহচর্য বন্ধ করে দিন। ইতিবাচক মানুষগুলো আপনার জীবনের চলার পথকে সহজ করে দিবে।সবক্ষেত্রে নিজের সততা বজায় রাখুন। সততা মূল্যবান একটি জিনিস। যা আপনাকে সবসময় নৈতিক শক্তি যোগানোর পাশাপাশি মনে ইতিবাচক শান্তি এনে দিবে।
১৬. নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুন : নিজের প্রত্যাশাকে ছোট করে ফেলুন। বিধাতা সবাইকে সমান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেননি। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের নিজস্ব সত্তা, চাওয়া-পাওয়া ও চেষ্টা সম্পূর্ণ আলাদা। অন্যের সাথে নিজের তুলনা করা একদম বাদ দিন। এটা আপনাকে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক ও মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলবে।
১৮. সব সময় হাসি-খুঁশিথাকুন এবং বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করুন :জীবনে দু:খ-কষ্ট এবং ব্যর্থতাগুলোকে মেনে নিতে শিখুন। দু:খ-কষ্ট-ব্যর্থতা আছে বলেই জীবন এতো সুন্দর।সমস্যা ছাড়া জীবন হয় না। বিপদ এবং কষ্টের সময়গুলি ধৈর্য্যের সাথে মোকাবিলা করুন। সবসময় হাসি-খুঁশি থাকুন। পারিবারিক শান্তি বজায় রাখুন। এটি আপনাকে মানসিকভাবে শক্তি যোগাবে এবং ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করবে।
১৯.ক্ষমা প্রদর্শন করা শিখুন : জীবনে চলার পথে প্রত্যেকটি মানুষই ভুল করে। অন্যের ভুলগুলোকে ইতিবাচক হিসাবে দেখুন। মানুষকে তার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রদর্শন করুন। এটির মাধ্যমে আপনি নিজের কাছে এবং সমাজের সবার কাছে ইতিবাচক হয়ে উঠবেন।
২০. নিজেকে সর্বসেবা ও গুরুত্বপূর্ণ ভাবা বন্ধ করুন :নিজেকে বেশী বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভাবা এবং তৈরী করার চেষ্টাআপনারনিজের মধ্যে এক ধরণের অসম প্রতিযোগিতা তৈরীকরবে। এর ফলে আপনি ক্রমশ নেতিবাচক মানুষ হিসাবে গড়ে উঠবেন। সবসময় সাধারণ থাকা ও ভাবার মানসিকতা তৈরী করুন এবং সমাজে নিজের অবস্থান প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন।
২১. প্রার্থনা ও ব্যায়াম করুন এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন : সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন। নিয়মিত প্রার্থনা ও শারীরিক ব্যায়াম করুন। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন। সুস্থ দেহ আপনাকে সুস্থ মন ও শান্তিময় জীবন উপহার দিবে।
মানুষের জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। কখন মৃত্যূর ডাক চলে আসবে মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউই জানেনা। নিজেকে সত্যিকারের মানুষ হিসাবে ইতিবাচক হিসাবে গড়ে তুলুন।
লেখক : : মো: তবিবুর রহমান। এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (বেসরকারী বিক্রয় ও বিপণন প্রতিষ্ঠান)