গাজীপুরে শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে এলিগেন্স গ্রুপের তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সোমবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া মনিপুর এলাকায় একই ক্যাম্পাসে এলিগেন্স গ্রপের ক্যাসিওপিয়া এ্যাপারেলস ও ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশন কারখানা রয়েছে। এ দু’টি কারখানায় সাড়ে তিন সহ¯্রাধিক শ্রমিক কাজ করে। সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ দেয়। সকাল ৯টার দিকে কর্তৃপক্ষ হঠাৎ কারখানার ৭শতাধিক শ্রমিককে ছাটাইয়ের ঘোষণা দিয়ে তালিকা প্রকাশ করে। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। তারা শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি শুরু করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে।

শ্রমিকরা আরো জানায়, যারা দীর্ঘদিন ধরে এ কারখানায় চাকুরি করছেন তাদের বেশীরভাগই রয়েছে এ ছাটাইয়ের তালিকায়। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে ছাটাইকৃতদের পরবর্তীতে নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাটাইয়ের পর নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হলে চাকুরির ধারা অব্যহত থাকবে না। এতে পুরাতন শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তারা বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কারণে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। তারা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে। শ্রমিক বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের উদ্যোগে আলোচনা শেষে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ছাটাই কার্যক্রম বাতিল করার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে।

কারখানার নির্বাহী পরিচালক রবি আজম জানান, বর্তমানে পোশাক তৈরীর অর্ডার না থাকায় এলিগেন্স গ্রপের ক্যাসিওপিয়া এ্যাপারেলস ও ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশন কারখানা দু’টিতে উৎপাদন কাজ নেই। এ ছাড়াও রফতানীর জন্য প্রায় সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১৫ লাখ তৈরী পোশাক শিপমেন্টের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্রেতারা (বায়ার) ওই সব পোশাক সরবরাহ নিচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে এ প্রতিষ্ঠাণটি। উপায়ান্তর না পেয়ে গত ২৭ মার্চ ওই কারখানা দু’টি লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

তিনি জানান, কারখানায় কাজ না থাকায় কিছু শ্রমিককে ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে সপ্তাহ খানেক আগে কারখানা কর্তৃপক্ষ বিজিএমইএ’র সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে ৬টি শ্রমিক সংগঠণের নেতৃবৃন্দসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক, কলকারখানা অধিদপ্তর ও শ্রমবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত সবার সম্মতিতে ছাটাইয়ের জন্য প্রায় সাড়ে ৭শ’ শ্রমিকের একটি তালিকা তৈরী করা হয়। ওই তালিকা সংশ্লিষ্ট শ্রমিকসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের পাওনাদি পরিশোধেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকদের মে মাসের বেতন সোমবার ও মঙ্গলবার পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী ছাটাইকৃতদের পাওনাদি আগামী ২০জুনের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। এরপ্রেক্ষিতে কিছু সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে সোমবার কারখানা খোলা হয়। তবে ছাটাইকৃতরা কারখানায় প্রবেশ করেনি। তবে কারখানার পরিস্থিতির উন্নতি হলে পরবর্তীতে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ করা হবে। এদিকে সোমবার সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ বহিরাগত লোকজন কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এসময় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে আধা ঘন্টা পর শ্রমিকরা মহাসড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান নেয়।