গাজীপুরের শ্রীপুরে পৃথক ঘটনায় নিহত গার্মেন্টসকর্মী এক তরুণীসহ অটোরিক্সা চালক এক কিশোরের লাশ গজারী বন থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। কিশোর চালককে খুনের ঘটনায় পুলিশ অটোরিক্সার এক মিস্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। ময়না তদন্তের জন্য নিহতদের লাশ সোমবার হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার এসআই আশীষ কুমার দাস জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (১২) শনিবার বিকেলে তার নানার অটোরিক্সা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এসময় প্রতিবেশী যুবক ইমন হোসেন (১৯) অটোরিক্সার ব্যাটারী ক্রয়ের কথা বলে তাকে পার্শ্ববর্তী নয়নপুর বাজারে নিয়ে যায়। ইমন একই এলাকার সুমন মিয়ার ছেলে। বাবা-মা’র বিচ্ছেদের পর হতে ইমন ওই এলাকায় তার নানা শহর আলীর বাড়িতে থেকে অটোরিক্সার মিস্ত্রীর কাজ করতো। বাজার থেকে ফেরার পথে অটোরিক্সাসহ হৃদয়কে নয়নপুর-সাতখামাইর সড়কের দরগাহ্র চালা পশ্চিম পাড়ার মাঝেরটেক এলাকার গজারীবনের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে একটি টেকের ঢালে নিয়ে রশি ও লতাপাতা দিয়ে কিশোর হৃদয়কে শ্বাসরোধ করে ও হাত-পা বেঁধে হত্যা করে। হত্যার পর নিহতের মাথা সেখানে মাটিচাপা দিয়ে রেখে অটোরিক্সাটি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সন্ধ্যার পরও হৃদয় বাড়ি না ফেরায় স্বজনরা বিভিন্নস্থানে তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ঘটনার পর রাত ৮টার দিকে ইমন অটোরিক্সাটি বিক্রি করতে স্থানীয় বরমী বাজার পাঠানটেক এলাকায় নিয়ে যায়। এসময় ক্রেতাদের প্রশ্নের মুখে সে অটোরিক্সার মালিকানা প্রমাণে ব্যার্থ হয়। এতে এলাকাবাসির সন্দেহ হলে তারা ইমনকে আটক করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও হৃদয়ের স্বজনরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হৃদয়কে খুন করে অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে ইমন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার ভোররাতে পুলিশ গজারীবন থেকে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধার এবং ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি জব্দ করে। ইমন প্রায় ৯ মাস আগে বিয়ে করে। পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের নানা আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ইমনের মা রোজিনা স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার জালেক শহর মতিমার্কেট এলাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ী নবী হোসেনকে বিয়ে করেন।
অপরদিকে, একই ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামের গভীর গজারী বনের গাছে ঝুলন্ত গার্মেন্টস কর্মী এক তরুণীর লাশ রবিবার উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম মদিনা (১৯)। সে স্থানীয় গলদাপাড়া গ্রামের নূরুল ইসলামের মেয়ে। মদিনা পাশ্ববর্তী ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক।
শ্রীপুর থানার এসআই কামরুল ইসলাম ও নিহতের স্বজনরা জানান, রবিবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয় মদিনা। এরপরই সে নিখোঁজ হয়। দীর্ঘসময় বাড়িতে না ফেরায় স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে তার খোঁজ করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তারা বাড়ির পার্শ্ববর্তী গভীর গজারী বনের একটি গাছের ডালের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তার ঝুলতে দেখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।