করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও এক পুলিশ সদস্য মারা গেলেন। শ্রী রঘুনাথ রায় (৪৮) নামের ওই পুলিশ সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) দক্ষিণ বিভাগের আলফা কোম্পানিতে এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুলিশের ৬ সদস্য মারা গেলেন। এদিকে যতই দিন যাচ্ছে বেড়ে চলেছে করোনায় পুলিশ সদস্যদের আক্রান্তের হার। আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১২শ ছুঁই ছুঁই। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১ হাজার ১৯০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডিএমপিতেই কর্মরত ৫৭৬ জন। সহকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন পুলিশের ১ হাজার ২৬০ সদস্য। আইসোলেশনে আছেন আরও এক হাজার ৮৯ জন। গতকাল পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮৫ জন। পুলিশ সদর দপ্তরে দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো সদস্য মারা গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সরকারঘোষিত ক্ষতিপূরণের বাইরে বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা আইজিপি ঘোষিত। বাকি পাঁচ লাখ টাকা হচ্ছে কর্তব্যরত অবস্থায় কোনো সদস্য মারা গেলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সরকারঘোষিত ক্ষতিপূরণ গ্রেড অনুযায়ী ৩৭ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পাবেন। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে চাকরিবিধি অনুযায়ী অন্য সুযোগ-সুবিধাও পুলিশ সদস্যরা পাবেন। আর মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন এমন পুলিশ সদস্য যদি আক্রান্ত হন তবে তিনি গ্রেড অনুযায়ী সরকারঘোষিত ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পাবেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে পুলিশের মারা যাওয়া ছয় সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই ডিএমপিতে কর্মরত। তাদের মধ্যে সর্বশেষ মারা গেলেন পিওএম দক্ষিণ বিভাগের আলফা কোম্পানির এএসআই শ্রী রঘুনাথ রায়। অন্য পাঁচজন হলেন পিওএম পশ্চিম বিভাগের এসআই সুলতানুল আরেফিন, ডিএমপিতে কর্মরত এএসআই আবদুল খালেক, ট্রাফিক কনস্টেবল আশেক মাহমুদ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন এবং পুলিশের বিশেষ শাখার এসআই নাজির উদ্দীন।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, শ্রী রঘুনাথ রায়ের করোনা ধরা পড়ার পর তিনি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। বুধবার সকালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। তার বাড়িতে স্ত্রী, এক মেয়ে ও ছেলে রয়েছে। পুলিশের ব্যবস্থাপনায় রঘুনাথ রায়ের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মৃত্যুপরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
অধিকসংখ্যক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, পুলিশিং একটি ইউনিক পেশা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশার ব্যাপক সুযোগ এ পেশায় রয়েছে। এটি অন্য কোনো পেশায় নেই। এ বিশেষ দিকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে বর্তমান এ পরিস্থিতিতে। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার জন্য পুলিশকে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে হয়েছে এবং আইসোলেশন নিশ্চিত করার জন্যও মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়েছে। এ ছাড়া খুব কাছে থেকে এগুলো নিশ্চিত করতে হয়। পাশাপাশি পুলিশ যখন দেখে কোনো রোগীর বা ব্যক্তির চিকিৎসা প্রয়োজন, হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা সেই রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। আবার দ্রব্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য বাজারে যেতে হয়েছে। মানুষের কাছে থেকে কাজ করতে হয়েছে। বিভিন্ন কারণে কোথায়ও বিক্ষোভ হলেও সেখানে পুলিশকে মাঝখানে থেকে কাজ করতে হয়েছে। এই ভাইরাসে যখন কেউ মারা যাচ্ছেন আর কেউ এগিয়ে না এলেও পুলিশ সদস্যরা যাচ্ছেন। ওই ব্যক্তির জানাজা বা সৎকারে এবং দাফনে যাচ্ছেন এতে পুলিশে কিছু ঝুঁকি থাকছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সুরক্ষা সামগ্রী যা পরিধান করছি তা শতভাগ সুরক্ষা কখনো দেয় না। এ ধরনের ঝুঁকি আমাদের কাজে রয়েছে। আমাদের কাজে বৈচিত্র্যের কারণে, ইউনিকনেসের কারণে বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছি। এ ছাড়া পুলিশের কোনো একজন আক্রান্ত হলে অন্যদের মধ্যে সহজে সংক্রমিত হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে। ব্যারাকে বা পুলিশ লাইন্সে যেভাবে থাকে চিরাচরিতভাবে অল্প পরিসর জায়গায় অনেককে থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত মান উন্নয়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে। তবে হুট করে বর্তমান এ পরিস্থিতিতে ব্যারাকে বা লাইন্সে যারা অনেকে একসঙ্গে থাকেন। এ একসঙ্গে থাকা একটু ঝুঁকপূর্ণ হয়ে উঠেছে।