গাজীপুর মহানগরের মুসল্লীদের নামাজের জন্য মসজিদগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন নগরবাসীদের।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল ইসলাম বুধবার বিকেলে জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমনরোধে সারাদেশে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে মসজিদে নামাজ আদায়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে নির্দেশনা মেনেই নামাজ আদায় করতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে বুধবার এক ভিডিও বার্তায় গাজীপুরের মেয়র তার আগের (মঙ্গলবারের) দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন নগরবাসীদের।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, এ ব্যাপারে আমাদের যে নির্দেশনা আছে তাই ঠিক থাকবে। আমরা কেউ সরকারি নির্দেশনার বাইরে নই। ওই ব্যাপারে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মেয়রকে জানানো হয়েছে। মেয়র আমাকে বলেছেন, তিনি নিজেই ওটা সংশোধন/প্রত্যাহার করবেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, মসজিদ বা উপসনালয়ে ঘোষিত সরকারি সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের এখতিয়ার আমাদের কারো নেই। এটার পরিবর্তন করতে হলে সরকারের তরফ থেকেই আসতে হবে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনা মতেই গাজীপুর মহানগরের মসজিদগুলোতে নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি ওয়াক্তের নামাজে ৫জন করে, জুম্মার নামাজে ১০জন করে এবং তারাবিহ’র নামাজে ১২জন নিয়ে নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুর মহানগরের মসজিদগুলোতে সরকারের এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। ইতোমধ্যে মসজিদে মসজিদে ইমাম ও কমিটির সভাপতিকে ফোন করে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। মহানগরী এলাকায় মাইকিংও করা হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহানগরের মুসল্লীদের নামাজের জন্য মসজিদগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়ার মঙ্গলবারের নিজের ঘোষণা প্রত্যাহার করে বলেন, মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে সরকারের যে বক্তব্য সেটাই আমার বক্তব্য। মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে ‘সরকার যে নীতিমালা দিয়েছে ওটাতে থাকলেই ভালো হবে। তবে দেশের কারখানাগুলো খুলে দেওয়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে আমরা আছি।
গাসিক মেয়র তাঁর মঙ্গলবারের দেওয়া বক্তব্যের অবস্থান থেকে সরে এসে বুধবর অপর এক বার্তায় জানান, গাজীপুরের কোন্ জায়গায় করোনা ভাইরাস পজেটিভ আছে তা আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই। আমরা করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে আছি। তাই আমি আমার মহানগরীর সকল নাগরিককে বলব, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সকলে যেন তা মেনে চলি।
গাসিক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গাছা আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এক ভিডিও বার্তায় গাজীপুর মহানগরে যে এলাকায় করোনার সংক্রমন নেই সে এলাকার মসজিদগুলোতে মুসুল্লিদের নামাজ আদায় করার জন্য খুলে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছিলেন।
তিনি মঙ্গলবারের ঘোষনায় বলেছেন, যেহেতু গাজীপুরের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। এসব কারখানায় সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে যদি শ্রমিকরা কাজ করতে পারে, তাহলে মসজিদেও মুসুল্লীরা সামাজ আদায় করতে পারবে। মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে বাজারে ও দোকানে যাচ্ছে, ভীড় করছে। তাই এ রমজান মাসে এখন আর মসজিদের অল্পসংখ্যক মুসল্লিদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখার কোন প্রয়োজন নেই। শুক্রবারের জুমার নামাজ ও রমজানের তারাবির নামাজে মুসল্লিগণ অংশ নিতে পারবেন। এতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোন বাঁধা থাকবে না
তিনি মঙ্গলবারের ওই ভিডিও বার্তায় বলেছেন, যারা অসুস্থ নয় এবং যে সব ওয়ার্ডে করোনা ভাইরাস পজেটিভ রোগী পাওয়া যায়নি, সে সব এলাকার মসজিদে যদি মুসল্লিরা নামাজ পড়তে চায়, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা হবে না। তবে ওইসব এলাকায় যেন বাইরে থেকে কোনো লোক করোনার উপসর্গ নিয়ে আসতে না পারে, সে দিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।