প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ২১৮ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৫২ জন। আজ বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছেন কনস্টেবল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ মোট ২১৮ জন সদস্য। কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৬৫২ জন।

পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. বেনজীর আহমেদও ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা। নিয়মিত আক্রান্ত সদস্যদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার জন্যও দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা। পাশাপাশি দায়িত্বরত আর সবাইকে সুস্থ রাখার জন্যও নেওয়া হচ্ছে সম্ভবপর সকল উদ্যোগ।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আক্রান্ত এই পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পর্যাপ্ত আয়োজন রাখা হয়েছে। এই পুলিশ সদস্যদের সুস্থ করে তুলতে পুলিশের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

করোনার মহামারিতে পুলিশ যেসব কাজ করছে

প্রাণঘাতী করোনভাইরাসের মহামারিতে দেশের দুই লক্ষাধিক পুলিশ সদস্যের একটি বড় অংশ সরাসরি মাঠে থেকে করোনার বিস্তাররোধে কাজ করছেন। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য তারা সম্ভবপর সব কিছু করছেন।

যেকোনো সমাবেশ ও লোকসমাগমে আইনি ব্যবস্থা, অপরাধ দমন, আসামি গ্রেপ্তার ও তাকে আদালতে প্রেরণ, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যিক খাদ্য ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেওয়া, দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ, মজুতদারি ও কালোবাজারি রোধ, সরকারি ত্রাণ ও টিসিবি’র পণ্য বিতরণে অনিয়মের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন পুলিশ।

এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়ন, খোলা স্থানে বাজার স্থানান্তর, নিভৃতে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া, কৃষি ও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে বিভিন্ন স্থানে ধান কাটার শ্রমিক প্রেরণ, অসুস্থ সাধারণ রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া ও চিকিৎসা পেতে সহায়তা করা, প্রিয়জন পরিত্যক্ত ও পথের পাশে পড়ে থাকা মৃতব্যক্তির পাশে যখন আর কেউ নেই তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও যথাযথ সম্মানের সঙ্গে তার সৎকার করা-এমন হাজারো ইনোভেটিভ কাজ করে চলছে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা।

ইতিমধ্যে পুলিশের এমন কর্মকাণ্ড সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের এই ত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই এগিয়ে আসছেন মানুষের সেবায়। পুলিশ তাদেরকেও সহায়তা করছে মানবিক কাজে।

এ সকল কাজ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য জেনে-শুনেই জীবনের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। যেহেতু করোনা বিস্তার রোধে পুলিশকে প্রতিটি কাজেই মানুষের খুব কাছে যেতে হয়, মিশতে হয় মানুষের সঙ্গে, তাই নিজের অজান্তেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশের কোনো কোনো সদস্য।