করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ইতালী ফেরত ৪৮জনের মধ্যে ৪৪জন কোয়ারেন্টাইনের জন্য গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে সোমবারেও অবস্থান করছেন। সেখান থেকে মুক্ত হতে এদিনও সকালে তারা বিক্ষোভ করেছেন। এদিকে লক্ষণীয় মাত্রায় জ¦র থাকায় অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রবিবার এ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো চারজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট সোমবার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছেনি।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাকী জানান, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ইতালী থেকে ফেরত আসা ৪৮জন বাংলাদেশী প্রবাসীকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তঃর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শনিবার মধ্যরাতে দু’টি বাসযোগে গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ হাসপাতালে ৭০জনকে আইসোলেশনের জন্য ব্যবস্থা করে গত কয়েকদিন ধরে প্রস্তুত রাখা হয়। ইতালী ফেরত এ কেন্দ্রের সবাইকে গুরুত্ব সহকারে যতেœ রাখা হয়েছে। তারপরও তারা নানা অভিযোগ তুলে এখানে থাকতে চাচ্ছেন না। এখান থেকে বের হয়ে যেতে সোবার সকালেও তারা হৈচৈ করেছেন। এরআগে রবিবার বিকেলও তারা বিক্ষোভ শুরু করেছে। রবিবার বিক্ষোভকারীরা ওই হাসপাতালের ভেতরের কলাপসিবল গেইটের তালা ভেঙ্গে হাসপাতাল চত্ত্বরে বের হয়ে পড়েন। এসময় তাদের অনেক বুঝিয়ে ভেতরে নেয়া হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের পরিবেশ শান্ত রয়েছে। হাসপাতাল এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনের জন্য আনা ইতালী ফেরত ৪৮জনের মধ্যে ৪জনের দেহে লক্ষণীয় মাত্রায় জ¦র থাকায় তাদেরকে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়া যায়নি। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্টে তাদের কারো শরীরে করোনা ভাইরাস পজেটিভ হলে এ হাসপাতালে অবস্থানরত ৪৪জনকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কারণ তারা ঢাকায় পাঠানো ব্যক্তিদের সংস্পর্শে ছিলেন। যদি স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টে সবার করোনা ভাইরাস নেগেটিভ হয় তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি স্বাপেক্ষে হাসপাতালে অবস্থানরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে আপাততঃ এ হাসপাতালে অবস্থনরতরা সবাই ভাল আছেন। তাদের আর কোন সমস্যা নেই।
তিনি আরো জানান, এখান থাকা ইতালী প্রবাসীরা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছে। তাদের বিষয়ে তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত চায়। সোমবার সকালে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম হাসপাতাল পরিদর্শণ করেছেন। এসময় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার দাবী জানিয়ে কোরেন্টাইনে থাকা ইতালী ফেরত কয়েকজন হৈচৈ করেছে। তবে তাদের বেলায় সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কিছু করার নেই। হাসপাতালে রেখে তাদের করোনা সংক্রমনের আলামত আছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখানে তাদেরকে করোনা ভাইরাস বিষয়ক সচেতনতামূলক পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এ হাসপাতালে একজন মেডিক্যাল অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। কোয়ারেন্টাইনের জন্য নিয়ে আসা লোকদের এখানে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও করোনা ভাইরাস বিষয়ক সচেতনতামূলক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি, বিছানাপত্র, ফল, চা ও কেটলীও সরবরাহ করা হচ্ছে। হাসপাতালে মশার উপদ্রুব থেকে রক্ষা পেতে তাদের মশারী ও কয়েল সরবরাহ করা হয়েছে। হাসপাতালের প্রতি কক্ষে ৩/৪ফুট গ্যাপ দিয়ে ১০জন থেকে ৬জন করে রাখা হয়েছে। এছাড়া এক প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে একটি কক্ষে আলাদা করে রাখা হয়েছে।
জিএমপি’র পূবাইল থানার ওসি মো. নাজমুল হক ভুইয়া জানান, রবিবার বিকেলে বিক্ষোভ ও ভাংচুরের খবর পেয়ে সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে তাদের বুঝিয়ে ভিতরে পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সোমবার সকালেও তারা হৈচৈ করলেও বিকেলে হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।