গাজীপুরের শ্রীপুরে নামের মিল থাকায় বন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত এক আসামি করাতকল মালিকের পরিবর্তে এক চা বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত চা বিক্রেতা গত পাঁচদিন ধরে জেল হাজতে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ প্রকৃত আসামি ওই করাতকল মালিক উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতের বাবা ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর সভার কেওয়া পশ্চিমখন্ড দারগারচালা (মসজিদ মোড়) এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে রফিকুল ইসলাম একজন চা বিক্রেতা। চা বিক্রি করে তিনি সংসার চালান। তার জাতীয় পরিচয়পত্র (৩৩২৮৬০৮০৪৪১৫২) অনুযায়ী জন্ম ২ এপ্রিল ১৯৭৭ইং সাল। তার বাবার নাম নূর মোহাম্মদ এবং মায়ের নাম জামিনা খাতুন। অপরদিকে, মামলার প্রকৃত আসামী কেওয়া পশ্চিম খন্ডের বেগুন বাড়ি এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে করাতকল মালিক রফিকুল ইসলাম। জাতীয় পরিচয় পত্র (১৯৮০৩৩২৮৬০৮০৪১৮৯৭) অনুযায়ী রফিকুল ইসলামের বাবার নাম নুর মোহাম্মদ এবং মায়ের নাম রহিমা খাতুন। তার জন্ম তারিখ ১৬ই জানুয়ারি ১৯৮০ এবং ভোটার সিরিয়াল নং-১৬১১।

শ্র্রীপুর বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, লাইসেন্সবিহীন করাতকলে গজারি গাছ চেরাই করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই শ্রীপুর সদর বন বিট অফিসার সহিদুর রহমান কেওয়া পশ্চিম খন্ডের বেগুন বাড়ি এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে করাতকল মালিক রফিকুল ইসলামকে আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বন) আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত এ মামলায় রফিকুলের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে শ্রীপুর থানাকে গ্রেফতারের নির্দেশ পাঠানো হয়।

গ্রেফতারকৃতের বাবা আরো জানান, গত শুক্রবার শ্রীপুর থানা পুলিশের এএসআই কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করতে দারগারচালা মসজিদ মোড় এলাকায় যায়। এসময় পুলিশ আসামীর ও বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় ভুলক্রমে প্রকৃত আসামী করাত কলের মালিকের পরিবর্তে চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলামকে তার দোকান থেকে গ্রেফতার করে। ঘটনার সময় উপস্থিত এলাকাবাসী পুলিশের ভুলের কথাটি তুলে ধরলেও পুলিশ স্থানীয়দের বক্তব্য আমলে না নিয়ে ও যাচাই বাছাই না করে চা বিক্রেতা রফিকুলকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে ওই মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

এব্যাপারে ওই মামলার প্রকৃত আসামী রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে করাতকলের ব্যবসা করে আসছেন। মামলাটি তার বিরুদ্ধেই করা হয়েছিল। পুলিশ যে মামলায় চা বিক্রেতা রফিকুলকে গ্রেফতার করেছে সে মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

এবিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান বলেন, পুলিশের একটু ভুলের কারণে একজন সাধারণ নিরপরাধ মানুষ জেল খাটছেন। এর দায় কে নেবে ?

শ্রীপুর থানার এএসআই কফিল উদ্দিন বলেন, চা-বিক্রেতা রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর দীর্ঘ সময় থানায় রাখা হয়। কিন্তু তখন কেউ ব্যাপারটি জানান নি।

শ্রীপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আক্তার হোসেন বলেন, মামলাটি আদালতে দায়ের করা। মামলায় উল্লেখিত আসামি ও গ্রেফতারকৃত দু’জনেরই নাম, বাবার নাম ও ঠিকানা একই। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মামলার প্রকৃত আসামি কি-না সে ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে যতদূর জানতে পেরেছি গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি একজন চা বিক্রেতা, অপরদিকে মামলার আসামি করাতকলের মালিক। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি নিরাপরাধী হলে আইন তার পক্ষে কাজ করবে।