অবশেষে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটের তারিখ পরিবর্তন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের জরুরি সভায় নতুন তারিখ ঠিক হয়। এদিকে ২০২০ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পূর্বনির্ধারিত সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। রাত সাড়ে আটটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি জানান।
সিইসি বলেন, ভোটের তারিখ নিয়ে আমরা একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। ৩০ তারিখ পূজার দিন র্নিধারিত আছে। সেটা মাথায় রেখে, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে যেন আঘাত না লাগে, সেজন্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটির ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি তারিখে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল, সে কারণে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, তারা ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরু করবেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেই ভোট পেছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও সরস্বতী পূজা আগামী ৩০ জানুয়ারি। পূজা ও নির্বাচনের সময় সমন্বয় করতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। ওই দিন সরস্বতী পূজা বলে তফসিল ঘোষণার পরপরই তার বিরোধিতা করেছিল পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদও ভোটের দিন পরিবর্তনের দাবি জানায়। কিন্তু তা আমলে নেয়নি ইসি। এরমধ্যে ভোটের তারিখ পরিবর্তনে হাই কোর্টে রিট আবেদন হলে তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ইসি ৩০ জানুয়ারি ভোট করার বিষয়ে আরও শক্ত অবস্থান নেয়।
ইসির পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, ৩০ জানুয়ারিই ভোটগ্রহণের জন্য ‘উপযুক্ত’ দিন। কারণ তার পরের দিন ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার বলে সেদিন ভোটগ্রহণের নজির নেই। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে বলে প্রায় এক মাস আর ভোট করা যাবে না। গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনেও বসেন শিক্ষার্থীরা। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কর্মসূচি ঘোষণা করলে ভোটের দিন বদলের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।
আওয়ামী লীগসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো জানায়, ভোটের তারিখ পরিবর্তনে তাদের আপত্তি নেই। প্রধান প্রধান প্রার্থীরাও ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে ইসিকে আহ্বান জানায়।
শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক বললেও তাদের পক্ষে জনমত জোরাল হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে শনিবার আকস্মিকভাবে জরুরি বৈঠকে বসে ইসি। বৈঠকে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনারদের টেলিফোনে ডেকে নেওয়া হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বৈঠকে উপস্থিত হতে প্রথমে বলা হলেও পরে তাদের না ডেকে মতামত নেওয়া হয়। বৈঠকের আগে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সব কিছু বিবেচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।