নওগাঁ সদর উপজেলার শেষ সমীনা চকবুলাকী গ্রামে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে একাধিকবার ধর্ষনের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চায় ধর্ষিতার দিনমজুর পরিবার। এদিকে দফায় দফায় বৈঠক করেও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় গলা ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলো ধর্ষিতা ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার (ছদ্ম নাম)।

ধর্ষিতার বাবা জিয়াউর রহমান জানান, আমার মেয়ে সায়েম উদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজে ১০শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে একই গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে প্রভাবশালী ইমরান হোসেন ইমন দীর্ঘদিন যাবত আমার মেয়ের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তার সঙ্গে একাধিকবার দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। বিষয়টি আমাদের জানার বাহিরে ছিলো।

কিন্তু গত ৩ জানুয়ারী রাতে ইমন আমার মেয়ের শয়ন ঘরে প্রবেশ করে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে আমার মা বিষয়টি দেখতে পায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বৈঠকের মাধ্যমে মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ের দিয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করলেও ছেলের পরিবার তা অর্থের মাধ্যমে সমাধান করতে চায়। কিন্তু অর্থ নয় বিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি আমার মেয়েসহ আমরা সমাধান করতে চাইলে ছেলের পক্ষ তা মানতে চায় না। এভাবে বৈঠকের নামে তারা সময় পার করলে গত মঙ্গলবার রাতে চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে অনেক নাটকের পর গভীর রাতে অভিযোগটি থানা পুলিশ গ্রহণ করে।

এমতাবস্থায় মেয়ে লোকলজ্জা থেকে মুক্তির জন্য বৃহস্পতিবার সকালে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে মেয়েকে রাণীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসায় মেয়ে সুস্থ্য হলেও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। লোকলজ্জায় মেয়েটি এখন স্কুলেও যেতে পারছে না। আসামী পরিবার প্রভাবশালী ও অর্থশালী হওয়ার কারণে আমরা সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছি। কিন্তু থানায় অভিযোগ দেওয়ার কয়েকদিন পার হলেও আসামীকে আটক করতে না পারায় আমরা সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত।

সায়েম উদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল সাইদুল কবির বলেন দিনমজুরের ঘরের মেয়ে আকলিমা অত্যন্ত মেধাবী। আমরা এই বিষয়টি বিয়ের মাধ্যমে সমাধান করতে চাইলেও ছেলের পরিবার তা অর্থের মাধ্যমে সমাধান করতে চায়। তাই আমরা বিষয়টি সমাধান করতে না পারায় সুষ্ঠু বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আমি আশা করি থানা পুলিশ একটি শান্তিপূর্ন সমাধান করে দেবে এবং ধর্ষকের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি প্রদান করবে।

চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান বেদারুল ইসলাম মুকুল জানান, আমি ঘটনার জানার পর একাধিক বৈঠকে বিয়ের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় ভুক্তভুগি পরিবারকে আইনের আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করি। নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরায়ার্দী হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর মেয়ের জবানবন্দি নিয়েছি। এছাড়াও ডাক্তারী প্রতিবেদন অচিরেই হাতে পাওয়া যাবে। আর ঘটনার পর থেকে আসামী ইমন পলাতক থাকায় তাকে এখনোও আটক করা সম্ভব হয় নাই। আমি আশা রাখি অতিদ্রুত আসামীকে আটক করা সম্ভব হবে।

মোঃ খালেদ