ক্যাসিনো কালচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়ে সরকারের শুদ্ধি অভিযানে লাপাত্তা হয়েছিলেন বিতর্কিত ১২ কাউন্সিলর। তারা আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন। ১২ কাউন্সিলরের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৭ জন আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছেন ৫ জন। এসব কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা, দখল, মাদক ব্যবসায় ইন্ধন, জুয়ার আসরে মদতদান, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ওইসব কাউন্সিলরের কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে নালিশ জানিয়েও কোন ফল পাননি। শুদ্ধি অভিযানের সময় তারা দীর্ঘদিন আড়ালে থেকেছেন। কাউকে জন সমাগমে দেখা যায়নি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তারা আবার প্রকাশ্যে এসেছেন।
শুধু তাই নয়, আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশনে তারা মনোনায়ন চেয়েছেন দলের কাছে। দলও তাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। তারা মনোনায়ন পেয়েছেন। তাদের মনোনায়ন দেয়ার ফলে এলাকাবাসী হতাশ হয়েছেন। ওইসব এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের পথ আটকে দিতে পারেন।
এসব কাউন্সিলররা হচ্ছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার আফসার উদ্দিন খান, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুর রউফ নান্নু, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিব সারোয়ার মাসুম, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের হারুনূর রশীদ, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সালেম মোল্লা ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জাকির হোসেন। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হওয়া কাউন্সিলররা হচ্ছেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশ্রাফুজ্জামান ফরিদ, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলাম ভাট্রি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে মারুফ আহমেদ মুনসুর ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাসিবুর রহমান মানিক।
এইসব ওয়ার্ড কাউন্সিলররা শুদ্ধি অভিযানের সময় গাঢাকা দিয়েছিলেন। অফিস বাসায় তাদের পাওয়া যাচ্ছিল না। তাদের ফোন প্রায় সময় বন্ধ ছিল। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের অবস্থান জানাতে পারেননি। এমনকি সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা তাদের কাছে সেবা গ্রহণের জন্য গেলে তারাও সাক্ষাৎ পাননি। তাদের কার্যালয়ের সচিবরা তাদের নামে বিভিন্ন ফাইলে সাক্ষর করছেন।
তবে এ বিষয়ে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, ‘ যেসব কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা মনোনীত হবেন না।’ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে উত্তরা মডেল টাউন, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রউফ নান্নুর বিরুদ্ধে পল্লবীর পলাশনগর ও কাউলিয়া বাঁধ এলাকায় মাদক বাণিজ্য এবং জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। শুদ্ধি অভিযানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তার বাড়িতে একাধিকবার হানা দিলেও তাকে পায়নি। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসানের বিরুদ্ধে তেজগাঁওয়ে চাঁদাবাজি ও রেলবস্তিতে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিব সারোয়ার মাসুমের বিরুদ্ধে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাদক ব্যবসার ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোলাচালানকারী চক্রের সঙ্গে তার যোগসাজসের অভিযোগ রয়েছে।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারুনূর রশীদের বিরুদ্ধে মনিপুর এলাকায় একাধিক জুয়ার আসর পরিচালনা ও আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা তোলার অভিযোগ আছে বলে জান গেছে। এছাড়াও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেম মোল্লার বিরুদ্ধে ভাষানটেক বস্তিতে মাদক ব্যবসা পরিচালনা ও মিনি ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ আছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এছাড়াও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নর্দায় পরিবহন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজসে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ আছে।
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যে ৫ জন কাউন্সিলর মনোনীত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও আছে বিস্তর অভিযোগ। ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশ্রাফুজ্জামান ফরিদের বিরুদ্ধে সবুজবাগ ও মায়াকানন এলাকায় মাদক ব্যবসা ও মিনি ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। শুদ্ধি অভিযানের পর তিনি লাপাত্তা ছিলেন। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতনের বিরুদ্ধে ফুলবাড়িয়া বাসস্টান্ডে চাঁদাবাজি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওষুধ চুরির অভিযোগ আছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ওই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ আছে দীর্ঘদিন ধরে।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলাম ভাট্রির বিরুদ্ধে মুগদা রেল কলোনীতে ও আশপাশের এলাকায় জুয়ার আসরে মদত দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার মারুফ আহমেদ মুনসুর হচ্ছেন ক্যাসিনো সম্রাট নামে খ্যাত মমিনুল হক সাঈদের অন্যতম সহযোগী। মতিঝিলের ক্লাবে তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে লালবাগ টেম্পো স্টান্ড থেকে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। শুদ্ধি অভিযানের পর তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।