সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার আন্তরিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘ফ্ল্যাশ অন রোহিঙ্গা জেনোসাইড’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক এবং আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে বারবার আশ্বাস দিলেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।’
মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাদেরকে এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা মাত্র আট হাজার রোহিঙ্গাকে নিজেদের নাগরিক বলে মেনে নিয়েছে। তারা হোমওয়ার্ক ঠিকমতো করেনি। তাদের আন্তরিকতার অভাব থাকায় দুই দফা উদ্যোগ নিয়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।’
আান্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের শুনানির মুখোমুখি হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ চালানোর বিষয়ে সেখানে অস্বীকার করেনি মিয়ানমার। তবে গণহত্যা হয়েছে সেটা নিয়ে আপত্তি করেছে তারা।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবিক দিক থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে জোর করে দেশে ফেরত পাঠাতে চায় না। তারা যেন নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। আমরা মিয়ানমার সরকারকে বলেছি, তোমাদের জনগণ তোমাদের বিশ্বাস করছে না। তোমরা রোহিঙ্গা নেতাদের দেশে নিয়ে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখাও। তাহলে তাদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হতে পারে। এ বিষয়ে আমরা মিয়ানমারকে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু এর কোনো জবাব আসেনি।’
রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আবদুল মোমেন বলেন, ‘কক্সবাজারে স্থানীয়দের থেকে রোহিঙ্গা দ্বিগুণ। স্থানীয় জনসংখ্যা পাঁচ লাখ। আর সেখানে এই মুহূর্তে ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এ কারণে কক্সবাজারের জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানকার তরুণরা চাকরি পাচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও, তা যথেষ্ট নয়। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ সরকারের পাঁচ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এই অর্থ আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করতে পারতাম।’