ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। উত্তরের মেয়র পদে পুনরায় আতিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণের মেয়র পদে সাঈদ খোকনের পরিবর্তে শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম ঘোষণা করা হয়। গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ধানম-িতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় উত্তরে ৫৪ জন ও দক্ষিণে ৭৫ কাউন্সিল প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়।
ঢাকার দুই সিটির মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঠিক করতে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে। জনগণের কাছে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কোন প্রার্থী নির্বাচনে জেতার উপযোগী, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘মনোনয়ন বোর্ডে যারা ছিলেন তারা প্রার্থীর জনপ্রিয়তার বিষয়টি দেখেছেন। প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার দিক বিবেচনায় নেওয়া হয়। মনোনয়ন বোর্ডের সবার সম্মতিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, এসএম কামাল হোসেন, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, সুজিত রায় নন্দী, রিয়াজুল কবীর কাওসার, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমান, সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটির মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজাল বাবু উপস্থিত ছিলেন।
প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগেই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নেতাকর্মীদের নিয়ে কার্যালয়ে আসেন ফজলে নূর তাপস। পরে সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিশাল শোডাউন নিয়ে কার্যালয়ে হাজির হন উত্তরের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম।
অনুভূতি প্রকাশে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা উত্তরে গত উপনির্বাচনে জনগণ আমাকে নির্বাচিত করে। আবার আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। গত ৯ মাসে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি, আপনারা সবাই তা জানেন। যেদিন থেকে দায়িত্ব পেয়েছি, সেদিন থেকে একটি দিনও নষ্ট করিনি। আগামী নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সবার সহযোগিতা চাই।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ জন্য আমার ও ঢাকা উত্তর সিটির জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’
তাপসের মনোনয়ন প্রাপ্তিতে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটি আমাদের জন্য বড় অর্জন, বড় পাওয়া। আমরা একসঙ্গে কাজ করব। উত্তর ও দক্ষিণ মিলে একটি সুন্দর ঢাকা শহর উপহার দিতে পারব এ প্রত্যাশা করি।’
অনুভূতি প্রকাশে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চান। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেই উন্নত বাংলাদেশের উন্নত রাজধানী বিনির্মাণে কাজ করা অত্যন্ত আবশ্যক। সেই বিবেচনা করেই তিনি সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করলেন।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে, নাগরিক সুবিধাগুলো এখনো পাচ্ছে না, তাহলে দুইভাগে বিভক্ত করলে হয়তোবা সুযোগ-সুবিধা আরও নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা দেখছি দক্ষিণ করপোরেশনের মানুষ কিন্তু এখনো অবহেলিত। তারা তাদের মৌলিক সুবিধা এখনও পাচ্ছে না। এই বিষয়গুলো আমাকে হতাশ করেছে এবং পীড়া দিয়েছে। সেই চিন্তা-চেতনা থেকেই আমি ভাবলাম যে আরেকটু বৃহত্তর পরিসরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আমাকে মনোনয়ন করে এবং জনগণ যদি নির্বাচিত করে তাহলে আমি এ কাজগুলো করতে পারব।’
তাপস বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে চাইব ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি একটা মহাপরিকল্পনা করতে। আর সেটা হবে ২০৪১ সালকে সামনে রেখে।’
সংসদ থেকে পদত্যাগ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। গতকাল রবিবার দুপুরে স্পিকার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তাপসের প্রেস সচিব তারেক সিকদার এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে বিকালে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়। শূন্য হওয়া এই আসনে এখন উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।