গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আগামী ১০ জানুয়ারি হতে শুরু হচ্ছে এবারের বিশ^ ইজতেমা। দুই পর্বের এ বিশ^ ইজতেমা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম এ প্রস্তুতি সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় ইজতেমার আয়োজনে করণীয় নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, যানজট নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য সেবা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতসহ মুসল্লিদের বিভিন্ন সেবা বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমা ময়দানের আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতিমূলক যাবতীয় কাজ আগামি ৭ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সভায় জানানো হয় এবারের বিশ্ব ইজতেমার তিনদিন ব্যাপী প্রথম পর্ব আগামি ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে এবং ১২ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্বের বিশ^ ইজতেমা। এরপর চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে তিনদিন ব্যাপী দ্বিতীয় পর্বের বিশ^ ইজতেমা। ১৯ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ^ ইজতেমা। ইজতেমার প্রথম পর্বে মাওলানা জুবায়ের অনুসারী এবং দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সা’দ অনুসারীগণ অংশ নেবেন।
ইজতেমার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানানো হয়, পুরো ইজতেমা ময়দানে সাড়ে চার শতাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীর সদস্যগণ উপস্থিত থাকবেন। থাকবে জেলা প্রশাসনের ৩০টির বেশী ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়াও মাঠে নিয়োজিত থাকবে বোমা ডিসপোজাল টিম। ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বিজিবি সদস্য রিজার্ভ রাখা হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদেরকে মোতায়েন করা হবে। মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য ৩১টি টয়লেট ভবনে ৮ হাজার ৩৩১টি টয়লেট থাকবে। ১৭টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হবে। ইজতেমা ময়দান এলাকায় তিনটি গ্রীড থেকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রস্তুত রাখা হবে ৪টি শক্তিশালী জেনারেটর। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদীর উপর ৭টি ভাসমান সেতু তৈরী করবে সেনাবাহিনী। মুসল্লিদের জন্য ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু করবে এবং সকল ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে। রেল স্টেশনে তিন স্তরে টিকেট বিক্রি করা হবে। স্টেশনে মুসল্লিদের জন্য আলাদা অস্থায়ী বিশ্রামাগার ও ১০০টি টয়লেট তৈরী করা হবে। ইজতেমা ময়দানে মুসুল্লিদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য ২০টি পথ তৈরী করা হবে। এবার পুরো ইজতেমা ময়দানকে ৮৭টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এতে ৬৪টি জেলার মুসুল্লিরা খিত্তা অনুসারে অংশ নেবেন। এর মধ্যে ঢাকা জেলার জন্য ২৩টি খিত্তা এবং ময়মনসিংহ জেলার জন্য দু’টি খিত্তা রাখা হয়েছে। বাকী সকল জেলার জন্য একটি করে খিত্তায় থাকবে।
প্রস্তুতি সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু নাসার উদ্দিন, ইজতেমা ময়দানের মুরুব্বি মাওলানা মাহফুজুর রহমান, জিএম ইউসুফ, আবুল হাসনাত, হাজী সেলিম, প্রকৌশলী নূর হোসেন, হাজী রেজাউল করিম, ড. আলী আজগরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, আইনশৃংখলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।