গাজীপুরে বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবীতে দু’গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর শ্রমিকরা দ্বিতীয় দিন বুধবারেও কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রায় ৭ ঘন্টা ঢাকা-গাজীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতনভাতা পরিশোধের ঘোষণা দিলে আন্দোলনরতরা বিকেলে তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। গত দু’দিন শ্রমিক অসন্তোষ ও সড়ক অবরোধের কারণে স্থানীয়দের অবর্ণণীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
পুলিশ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের লক্ষীপুরা এলাকায় একই ক্যাম্পাসে স্টাইল ক্রাফট এবং ইয়ং ওয়ান্স গার্মেন্টসের শ্রমিকরা গত কিছুদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের পাওনা অক্টোবর ও নবেম্বর মাসের বকেয়া বেতন ভাতাসহ দু’বছরের ছুটির টাকা পরিশোধের দাবী জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার আশ^াস দিয়ে তারিখ নির্ধারণ করলেও পরিশোধ করেনি। গত বৃহস্পতিবার শুধুমাত্র অক্টোবর মাসের বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও তা পরিশোধ না করে পুনঃরায় মঙ্গলবার নতুন তারিখ ঘোষণা করে। এরপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে মঙ্গলবার সকাল হতে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও সড়ক অবরোধ করে। রাত সাড়ে ৭টার দিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শামসুন নাহার ভুইয়া ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে তিনি শ্রমিকদের পাওনা অক্টোবর মাসের বেতন ভাতা আগামী বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এবং নবেম্বর মাসের বেতনভাতা আগামী ২৩ ডিসেম্বর পরিশোধের তারিখ ঘোষণা করলে শ্রমিকদের একাংশ তা মেনে নিয়ে তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে অবরোধ তুলে নেয়। তবে শ্রমিকদের অপর অংশ ওই সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে বুধবার হতে পুনঃরায় তাদের আন্দোলন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে কারখানা এলাকা ত্যাগ করে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল হতে ওই দু’কারখানার শ্রমিকরা কারখানা গেইটে এসে জড়ো হতে থাকে। তারা কাজে যোগ না দিয়ে তাদের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবীতে দ্বিতীয়দিনের মতো এদিনও কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। কর্তৃপক্ষ দাবী মেনে না নেওয়ায় তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানার সামনে ঢাকা-গাজীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর অবস্থান নেয়। এসময় তারা প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার বিভিন্নস্থানে সড়কের উপর বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং যানবাহন আটকা পড়ে উভয়দিকে অন্ততঃ ৬/৭ কিলোমিটার ব্যাপী দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে যাত্রীরা পায়ে হেটে ও বিকল্প পথে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যান। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নারী-শিশু, রোগী, বয়স্ক লোকজনসহ স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে সড়ক অবরোধ তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়। এক পর্যায়ে বিকেলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আওলাদ হোসেন ও পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে পৌছে আন্দোলনরত শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে জিসিসি মেয়র জাহাঙ্গীর শ্রমিকদের পাওনা অক্টোবর মাসের বেতন ভাতা বুধবার বিকেলে এবং নবেম্বর মাসের বেতনভাতা আগামী ২৩ ডিসেম্বর পরিশোধের আশ^াস দিয়ে তারিখ ঘোষণা করেন। মেয়রের আশ^াসের প্রেক্ষিতে বিকেল পৌণে চারটার দিকে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে অবরোধ তুলে নিলে প্রায় ৭ ঘন্টা পর ওই সড়কে যানবাহন চলাচল পুনঃরায় শুরু হয়। শ্রমিকরা বৃহষ্পতিবার হতে তাদের কারখানার কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বিকেলে শ্রমিকদের আন্দোলন প্রত্যাহারের পর তাদের অক্টোবর মাসের পাওনাদি পরিশোধ কার্যক্রম শুরু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানা এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
স্টাইল ক্রাফটের কর্মী লাইজু ও মাসুদ রানা জানান, তাদের অক্টোবর এবং নবেম্বর মাসের বেতনসহ দুই বছরের ছুটির টাকা বকেয়া রয়েছে। পাওনা বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা দিয়েও তা পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ মঙ্গলবার তা পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওইদিন কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া না পেয়ে মঙ্গলবার হতে শ্রমিকরা কর্মবিরতী ও আন্দোলন শুরু করে। এদিন শ্রমিকরা কারখানার সামনে লক্ষীপুরা এলাকায় গাজীপুর-ঢাকা সড়কে অবস্থান নিয়ে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে। পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে আন্দোলনরত শ্রমিকরা বুধবার দ্বিতীয়দিনেও সকাল হতে বিকেল পর্যন্ত কারখানার সামনে গাজীপুর-ঢাকা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে।