ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে পিয়ন পদে চাকরি করেন ইয়াছিন মিয়া। অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি করে কামিয়েছেন কোটি-কোটি টাকা। জেলা শহরে রয়েছে তার তিনটি বাড়ি। রয়েছেন তিন স্ত্রীও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসে অডিটে কোটি টাকার ঘাপলা আসার পর নিখোঁজ হয়েছেন আলোচিত পিয়ন ইয়াছিন মিয়া। এই বিষয়ে ব্রাহ্মণবড়িয়া সদর সাব রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান বাদী সদর মডেল থানায় একটি নিখোঁজ সাধারন ডাইরী করেছেন। তবে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌল্লা খান জানিয়েছেন বিষয়টি তাদের নজরে আছে।

জানা যায় জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি উপজেলার আতুয়াকান্দি এলাকার মোহন মিয়ার ছেলে ইয়াছিনের পোস্টিং নাসিরনগর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে। বর্তমানে তিনি ডেপুটেশনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে আছেন। তার রয়েছে তিনটি ফ্ল্যাট-বাড়ি। নামে-বেনামে আরও অনেক সম্পত্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় জেলা রেজিস্ট্রার বিভাগে ২৩ বছর আগে অস্থায়ী ভিত্তিতে পিয়ন পদে চাকুরী পান ইয়াছিন। ২০০৬ সালে তার চাকুরী স্থায়ী হয়। এরপর নানা সময়ে তাকে আশুগঞ্জ ও নাসিরনগর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বদলি করা হলেও ঘুরেফিরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়েই চাকরি করে যাচ্ছেন। সাব রেজিস্ট্রার প্রায়ই তাকে দিয়ে অফিসে নকল ফি, তল্লাশি ফি, রেজিস্ট্রেশন ফিসহ চালানের টাকা জামা করানো হতো স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে। কিছুদিন আগে অফিসে অডিট হওয়ার পর কোটি টাকার ঘাপলার কথা ওঠে আসে সবার সামনে। এই ঘটনার পর গা ঢাকা দেন পিয়ন ইয়াছিন।

অভিযোগ ওঠেছে, ব্যাংকের ভূয়া চালান রশিদ তৈরি করে ইয়াছিন ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ইয়াছিন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সাব রেজিস্ট্রার সদর মডেল থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন যুগান্তরকে জানান এই ঘটনায় তার পিতা মোহন মিয়া ও তার প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তাকে খোঁজা হচ্ছে। ইয়াছিনের প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান, ২৫ বছর আগে ইয়াছিনের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে পিয়ন পদে চাকরি নেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘরে ৪ শতাংশ জায়গার ওপর সাজেদাকে একটি তিন তলা বিশিষ্ট বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন ইয়াছিন। কয়েক মাস আগে বড় ছেলেকে পাঠিয়েছেন ফ্রান্সে।

সাজেদাকে বিয়ে করার ১০ বছর পর আকলিমা নামে আরেক বিধবা নারীকে এক কন্যা সন্তানসহ বিয়ে করেন ইয়াছিন। ওই কন্যা সন্তান বড় হওয়ার পর তাকে ইতালি প্রবাসীর কাছে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই মেয়ের স্বামীর সাথে যৌথভাবে জেলা শহরের পাইকপাড়ায় ছয়তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন ইয়াছিন।

এদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমাকে বিয়ের পাঁচ বছর পর আরেক প্রবাসীর স্ত্রী মকছুরা বেগমের সাথে পরকিয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে তাকেও বিয়ে করেন ইয়াছিন। মকছুরাকে নিয়ে শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকায় নিজের কেনা একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন ইয়াছিন। এই ঘটনার পর মকছুরাকে নিয়েই গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি।

তাকে পাওয়া গেলে বের হতে পারে ব্যাংকে পাঠানো এই টাকা কোথায় আছে। এর সাথে কারও কোন সংশ্লিষ্ঠতা আছে কি না। তার বাবা মোহন মিয়া জানান, তার ছেলে ইয়াছিনের তেমন যোগাযোগ নেই। তারপরও আমরা তার খোঁজ নিচ্ছি। কোথায় আছে তা আমরা জানি না।ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তদন্ত চলছে। পুরো ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আইজিআর’র কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এই সময় তিনি জানান অফিস পিয়ন ইয়াছিনকে পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় সদর থানায় আমি বাদী হয়ে একটি নিখোঁজ সাধারন ডাইরী করা হয়েছে। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম আজাদ জানান অডিট শুরু হওয়ার পর সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে এই অনিয়ম ধরা পড়ে, তবে এই ঘটনায় যে জড়িত হউক না কেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি পিয়ন ইয়াছিন এর এত সম্পত্তি নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌল্লা খান যুগান্তরকে জানান বিষয়টি আমরা জেনেছি। যেহেতু বিষয়টি তাদের বিভাগীয় পর্যায় দেখা দেখা হচ্ছে। তারপরও তারা আমাদের কাছে কোন সহযোগিতা চাইলে আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করব। তবে এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে পিয়ন ইয়াছিন এর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা যায়নি।