ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা আর নেই (ইন্না লিল্লাহি…..রাজিউন)। আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনও তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে পরবর্তী তথ্য জানানো হবে বলেও জানান ইশরাক। সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর শোক প্রকাশ করেছেন।
কিডনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালের মে মাসে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান সাদেক হোসেন খোকা। তারপর থেকে গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ছিলেন নিউইয়র্ক সিটির ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ইসমত হোসেন। সেখানে থেকেই তিনি চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন। তবে বিদেশে থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলায় সাজা হয় সাদেক হোসেন খোকার।
এদিকে ২০১৭ সালের শেষদিকে খোকা এবং তার স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন সাবেক এ মেয়র। পাসপোর্ট না পেয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলেও এখনো সেই বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি।
সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে মাসে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন এবং তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২৯ নভেম্বর ২০১১ পর্যন্ত মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন সাদেক হোসেন খোকা।
অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। তাকে ঢাকার জুরাইনে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে। খোকার শ্যালক শফিউল আজম খান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে সাদেক হোসেন খোকার লাশ ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার ইচ্ছা অনুযায়ী জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে।
খোকার শ্যালক জানান, দুই বছর আগে সাদেক হোসেন খোকার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিউইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসে মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেও জবাব পাননি। এখন তার মৃতদেহ ঢাকায় নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রয়োজন।
তিনি আরও জানান, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে ট্রাভেল ডকুমেন্টের জন্য ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন। সেই কাগজ হাতে পাওয়ার পরই তার মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার সময়ক্ষণ পরিবার ঠিক করবেন।
এর আগে গতকাল রোববার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জানান, ‘নিউইয়র্কে সাদেক হোসেন খোকার পরিবার “ট্রাভেল পারমিট” এর জন্য আবেদন করলে আমাদের মিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি এবং তার স্ত্রীর যেহেতু পাসপোর্ট নেই সেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে অন্য দেশ থেকে নিজের দেশে ফেরার এটাই একমাত্র ব্যবস্থা।’ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্ট্যাটাসে আরও জানান, ‘আমি আমাদের নিউইয়র্কের কনস্যুলেটে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।’
মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম আরও জানান, ‘তিনি এবং তার স্ত্রীর নামে মামলা আছে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও থাকতে পারে (আমি নিশ্চিত নই) কিন্তু মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলে যা জেনেছি, তাদের আগমনের পর বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে।’
প্রসঙ্গত, আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাদেক হোসেন খোকা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। গত ১৮ অক্টোবর মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় তাকে ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে গত এক সপ্তাহ তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। চিকিৎসকেরা সাদেক হোসেন খোকার সুস্থ হয়ে ওঠার সবরকম আশা ছেড়ে দেন। এ কারণে হাসপাতালে যত লোক তাদের প্রিয় নেতাকে দেখতে গিয়েছেন সবার সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। সবার কাছেই তিনি দোয়া চেয়েছেন।