মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়নের চরপালরদী গ্রামের মোঃ শাহীন রাড়ী একজন পেশায় কৃষক। তার বয়স এখন প্রায়-(৫৫) বছর। পরিবারে রয়েছেন ৩ ছেলে মেয়ে সহ ৭জন সদস্য। তিনিই সংসারের এক মাত্র উপার্জনের অবলম্বন। তার উপার্জনের টাকায় চলে তার সংসার। সে বছরের ১২ মাস এ কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবে সবজির মধ্যে তিনি লাউ উৎপাদন করেন বছরের ১২ মাস। এতে করে সে প্রায় লক্ষাধীক টাকা আয় করে থাকেন। তার এ উপার্জনের টাকায় তার এক ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছেন। আর এ লাউ চাষ করেই আজ তিনি সফল ও স্বাবলম্বী একজন কৃষক হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি বর্ষাকালে ভাসমান সবজির চাষ করে থাকেন।
এলাকা ও মোঃ শাহীন রাড়ী সুত্রে জানাগেছে, তিনি লালশাক, আলু, বেগুন, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতি সবজিও উৎপাদন করেন। তবে অধিক গুরুত্ব দেন লাউ চাষের প্রতি। কারণ এ সবজি প্রায় সারা বছরই উৎপাদন করা যায়। এতে লাভও হয় অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘মানুষ প্রবল ইচ্ছা, পরিশ্রম ও দায়িত্বশীলতার মধ্য দিয়ে যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। আমি প্রথমে ঋণ নিয়ে ফসল উৎপাদন করে লোকসান পরেছি, কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। মনোবল ধরে রেখে পরিশ্রম করে গেছি। চাকুরি ছাড়াও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, সেটা আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।’ তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে লাউ আবাদ করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে এ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
শাহীনের সফলতায় এ অঞ্চলের অনেকেই এখন সবজি চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন বলে জানান ওই গ্রামের আলাউদ্দিন, রশিদুল ইসলাম, নিরঞ্জন সরকারসহ বেশ কয়েকজন কৃষক। তারা জানান, তারাও কৃষিপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। শাহীন রাড়ী তাদের কাছে অনুপ্রেরণা স্বরূপ। একসময় তিনি অভাবে দিন পার করতেন। এখন তার জমিতেই পরিচর্যার কাজ করেন অনেক শ্রমিক। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সবজি চাষ হয়েছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে। আর এ থেকে প্রায় ১০ হাজার টন সবজি উৎপাদন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস জানান, ‘এ উপজেলার মাটির গুণাগুণ ভালো। এ অঞ্চলে শীতকালীন সবজি ছাড়াও বেশকিছু সবজি ১২ মাস উৎপাদন হয়। এর মধ্যে লালশাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক অন্যতম। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবসময় কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে আসছি।’
সাবরীন জেরীন.মাদারীপুর।