শীতের আগমনের প্রায় তিন মাস দেরী থাকলেও শীতকালীন সবজি শিম উৎপাদনের তোড়-জোড় শুরু হয়েছে পাবনা জেলার বিভিন্ন গ্রামে। উৎফুল্ল হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। জেলার নয় উপজেলার মধ্যে আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী, সদর উপজেলায় শিম উৎপাদন হয় বেশি। পুরো জেলার ৩হাজার ৫ শত ২২ হেক্টর জমি আবাদের মধ্যে এই তিন উপজেলায় আবাদকৃত জমির পরিমান ৩ হাজার ৭হেক্টর। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করেছেন, এ অঞ্চলের মাটির গুণ, অনূকুল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৭৭ হাজার ৩শ’৩০ টন শিম উৎপাদন হবে এবারে।
মাঠ ঘুরলেই দেখা যায়, তর তর করে বেড়ে উঠা হাওয়ায় উঠতি বয়সী শিম গাছগুলো দুলছে। চোখ যতদুর যায়, মাঠের পর মাঠ শিম আর শিম। কৃষক পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই ক্ষেতে শিম পরিচর্যায় ব্যস্ত। অটঘরিয়া উপজেলার নাদুরিয়া গ্রামের একাধিক চাষী জানান, এ সব জমি ধান চাষের উপযুক্ত নয়। তাই তাদের মত অনেকেই শিম চাষ বিকল্প হিসাবে বেছে নিয়েছেন। ১৫ বছরের বেশি নিজেদের বীজ থেকেই তাদের গ্রাম সহ আশ-পাশের গ্রাম গুলোতে প্রায় তিন হাজার পরিবার শিম আবাদ করছেন। তাদের মতে, বিভিন্ন গ্রামে সুখের বাতাস বইছে শীম চাষের কারণে। মন্ডল পাড়ার তোফাজ্জল, ফকরুল সহ ক্ষেতে মরা ফুল ও পোকা বাছাইয়ের কাজ করছিলেন। তিনি জানান প্রত্যেকেই এবার ৩ বিঘা করে জমিতে শিম চাষ করেছেন। বীজ বপন থেকে শুরু করে বাজারে শিম তোলা পর্যন্ত তাদের বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। তারা আশা করছেন সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি জনের লাভ হবে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা। পারখিদির পুর গ্রামের ইউনুস আলির স্ত্রী শেফালি খাতুন জানান, বেশি লাভের কারণে তিনি ছেলে-মেয়ে সহ শিম ক্ষেতে কাজ করে আনন্দ পান। সোনাতলা, সরাবাড়িয়া গ্রামের কৃষকরা জানান, শিম আবাদের ক্ষেত্রে সরকার সহায়তা করলে, বিশেষ করে সার ও কীটনাশকের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া হলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হতে পারতো। সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের শাহদিয়ার গ্রামের ক’জন চাষী জানান, শিমচাষে বেশি লাভ। যে কারণে তারা একে একে শিম আবাদের জমি বাড়িয়েছেন। ঈশ্বরদী উপজেলার আথাইলশিমুল, খয়েরবাড়িয়া এলাকার মোস্তফা, সুরুজ, নান্টু সহ অনেকেই জানান, শিম চাষ করে তারা প্রত্যাশার চেয়েও এবার বেশি লাভের আশা করছেন।
অপরদিকে শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজার ও সমিতি। এখান থেকেই প্রতিদিন ৮০ থেকে ১’শ ট্রাক ভর্তি শিম ট্রাক লোড হয়ে ঢাকার কারওয়ান বাজার, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহীসহ দেশের প্রায় অধিকাংশ এলাকায় যাচ্ছে। প্রতি কেজি শিম একশ’ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুলাডুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম মালিথা জানান, তার ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ ও আশ-পাশের অনেকেই শিম আবাদ ও বাজারজাতকরণ সহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত রয়েছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ আজহার আলী জানান, শুধুমাত্র শিম চাষের কারণে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাওয়ায় তারা প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে তারা শীম চাষের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।