দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহিত প্রতিবেশীদের মধ্যে ‘সুসম্পর্ক ও গঠনমূলক’ নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) নয়া দিল্লিতে ইন্ডিয়া ইকোনমিক ফোরামের সমাপনী পে্লনারি অধিবেশনে কো-চেয়ার হিসেবে বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়াকে অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতাসক্ষম অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠতে হবে, যা অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সেতুবন্ধনে সদা প্রস্তুত থাকবে। গত শতকগুলোতে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সফল ও বিফল ধারণার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ভবিষ্যতের জন্য কয়েকটি মূলনীতি তুলে ধরেন, যার অন্যতম হলো- ভূ-রাজনীতিতে মৈত্রী ও সহযোগিতায় জোর দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা আমাদের জনগণের স্বার্থে আঞ্চলিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারসাম্য আনি। স্বল্পমেয়াদী অর্জনের জন্য আমরা দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ বিসর্জন দিতে পারি না। তিনি বলেন, তার সুদূরপ্রসারী ধারণায় উদ্বুদ্ব হয়ে এবং অভিন্ন দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে অভিন্ন সমৃদ্ধিতে তার বিশ্বাসে পরিচালিত হয়ে বিমসটেক, সার্ক, বিবিআইএন, বিসিআইএমের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতার উদ্যোগ নিচ্ছি।
পুরো অঞ্চলজুড়ে প্রতিটি মানুষের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও একতা অর্জনে অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু’ মানসিকতার ঊর্ধ্বে উঠার উপর জোর দেন শেখ হাসিনা । সরকারপ্রধান বলেন, বহুত্ববাদ শত শত বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তির উৎস। তাই ধর্ম, জাতি ও ভাষার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্র্যকে আমাদের উদযাপন করতে হবে। এটা মৌলিক। দ্রুততর প্রবৃদ্ধি অর্জনের সময়ে পুরো অঞ্চলের মধ্যে অসমতা যাতে না বাড়ে সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের তৈরি হোক অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে এবং তার সুফল লাখ লাখ প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, অনুন্নত দেশ বা সমাজ যাতে পিছিয়ে না পড়ে। তারুণ্যে আকাঙ্খা ও চাহিদাকে মূল্য দিতে হবে। আমাদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-দক্ষতা-বিনিয়োগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে একে অপরের হাত ধরে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সম্প্রদায় ও দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাই প্রধান। আমাদেরকে ভুল ধারণা ও ভুল বোঝাবুঝি কাটিয়ে উঠতে হবে।
সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়- বঙ্গবন্ধুর এ নীতি অনুসরণ করে আঞ্চলিক সম্পর্ক রক্ষার অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন তিনি। এক্ষেত্রে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অভিন্ন নদীর প্রবাহমানতা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ এখন কাজ করছে। আন্তঃদেশীয় গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে।
এধরনের সহযোগিতামূলক সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজজুড়ে অপরিহার্য। অন্যদিকে, আমাদের বেসরকারি খাতগুলো একে অপরের সঙ্গে স্বচ্ছ ও ন্যায্যভাবে প্রতিযোগিতা করবে।” অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্য দেন ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্জ বেন্ডে। প্যানেলিস্ট হিসেবে বুকিং ডটকম প্রধান জিলিয়ান ট্যানস, সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী হ্যাং সুই কিট,সেকোইয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈলেন্দ্র সিং ও অ্যাপোলো হসপিটাল এন্টারপ্রাইজ এক্সিকিউটিভ ভাইস-চেয়ারম্যান শোভানা কামেনিনি প্রমুখ।