অবিরাম বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তিস্তার বামতীরে বাধ ভেঙে কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে হাতীবান্ধার ব্যাওে পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় তা কমে ১৮ সেন্টিমিটারে দাঁড়ালেও সাড়ে ৯ টার দিকে তা আবারও বাড়তে থাকে।
তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৪টি উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাচল প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না, গড্ডিমারী, সিংগীমারী, ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডার ও কাকিনাসহ জেলার ১১ ইউনিয়নের নিম্নাচল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কমপক্ষে ৫ হাজার পরিবার। আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের ধুবনী এলাকায় কাঁচা সড়কের প্রায় ৫০ মিটার অংশ পানির তোড়ে ভেসে যায়। এতে ওই ইউনিয়নের পশ্চিম ধুবনী, ধুবনী, পূর্ব সিন্দুনা, চর সিন্দুর্নাসহ পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়।
এছাড়াও হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না, গড্ডিমারী, সিংগীমারী, ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডার ও কাকিনা ইউনিয়নের নিম্নাচল প্লাবিত হয়েছে। আবাদি জমি ও পুকুর জলাশয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
আকস্মিক তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে তিস্তাপারের মানুষ। সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবারও বন্যা পরিস্থিতির মুখে পড়েছে তারা। তিস্তার পানি দ্রুত হ্রাস না পেলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। দুই মাসে পরপর তিনটি বন্যা পরিস্থিতির ধকল এখনও তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি ।
হাতীবান্ধা উপজেলার হলদিবাড়ি গ্রামের কৃষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমার ৫ বিঘা জমির রোপা-আমন ধানের চারা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সময়মতো বানের পানি নেমে না গেলে রোপা-আমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অসময়ে আমরা আরও একটি বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। আর এ ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়বে।
তিস্তার চর গড্ডিমারীর মমিনুর রহমান বলেন, আকস্মিক তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাড়ি-ঘর বানের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদি পশু-পাখি আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আমরা কোনোরকমে নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধুভূষণ রায় জানান, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চর এলাকার রোপা-আমন ও সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে রোপা-আমনের তেমন ক্ষতি হবে না, তবে সবজির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফজলে করিম জানান, মঙ্গলবার রাতে তিস্তার পানি অনেক বেড়েছিলো। তবে সকাল আটটার দিকে কিছুটা হ্রাস পেলেও, সাড়ে নয়টা থেকে আবারও পানি বাড়ছে।