ঢাকার কাঁচাবাজারে পণ্যের যোগান বেশি থাকলেও দাম রয়েছে বাড়তির দিকে। বিশেষ করে সবজি ও মাছের বাজারে গত এক সপ্তাহ ধরেই চলছে অস্থিরতা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে গ্রামীণ সবজির প্রায় সবগুলোই বিক্রি হচ্ছে বেশ চড়া দামে। মাছের দামও বেশি হাকাচ্ছেন বিক্রেতারা।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করছে নানা ধরনের শাক-সবজি। এসব পণ্য পচনশীল হওয়ায় দিন ভেদে দামের পার্থক্য থাকে প্রতিনিয়ত। তবে, এ চিত্র শুধু পাইকারি বাজারের, খুচরা বাজারের অবস্থা একেবারে ভিন্ন। সেখানে পণ্যের দাম একবার বাড়লে কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। বাজার ভেদে শাক-সবজির দামের ব্যবধান দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি।
এদিন কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পটল বিক্রি করতে দেখা গেছে ২২ থেকে ২৫ টাকা, ঝিঙা ৩০ থেকে ৩২ টাকা, করলা ২২ থেকে ২৪ টাকা, কাঁকরোল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ২০ থেকে ২২ টাকা, শসা ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, কচুর ছড়া ৩০ টাকা, কচুর লতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। প্রতি পিস বাঁধাকপি ১২ থেকে ১৫ টাকা, ফুলকপি ১০ থেকে ১২ টাকা, কলা ১০ থেকে ১৫ টাকা হালি, লাউ প্রতি পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা, জালি কুমড়া ২০ থেকে ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে, পাইকারি এ বাজার থেকে খিলগাঁও, মালিবাগ, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা বাজারে দামের ব্যবধান পণ্যভেদে দুই থেকে তিনগুণ। সেখানে প্রতিকেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৫০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ১০০ টাকা, কচুর ছড়া ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। আর প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কলা ২৫ থেকে ৪০ টাকা হালি, লাউ প্রতি পিস ৪৫ থেকে ৭০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এসব বাজারে প্রতিকেজি টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গাজর ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা পাইকারি বাজারের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেশি।
এছাড়া, বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সবধরনের শাক। পাইকারি প্রতি আঁটি লাল শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কুমড়ার শাক ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, কলমি শাক ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজার ভেদে বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে পণ্যের অভাব না থাকলেও বিক্রেতারাই কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছেন।
শাহিন সুমন নামে শান্তিনগর বাজারের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে কোনো পণ্যের অভাব নেই, তবু বাড়তি দাম। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। বাজার মনিটরিং করা হলে অবশ্যই সব পণ্যের দাম কমে আসতো।মজিবর রহমান নামে খিলগাঁও বাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারে মালের সরবরাহ কমায় সেখানকার বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তবে, এ প্রতিবেদক তাকে পাইকারি বাজারের দামের তালিকা বললে মুহূর্তেই পাল্টে যায় সুর।
তিনি বলেন, আসলে পাইকারি বাজার থেকে মাল আনতে দুই জায়গায় বাড়তি টাকা দিতে হয়, গাড়ি ভাড়া বেশি, দোকান ভাড়া-কর্মচারীর খরচ আছে। এজন্য কিছুটা বাড়তি দাম রাখা হয়, তবে খুব বেশি না।কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রফিক বাংলানিউজকে বলেন, সবজি পচনশীল হওয়ায় দাম প্রতিদিনই কমবেশি হয়। আজ দাম কম, কাল বেশি হতে পারে। তবে, খুচরা বাজারে দাম বাড়লে তারা আর কমাতে চান না।
এদিকে, পেঁয়াজের দাম দুই-তিনদিন আগে কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমলেও আবার ফিরে গেছে আগের দামেই। বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, দেশি রসুন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকা, আদা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
তবে, অপরিবর্তিত রয়েছে মাংসের বাজার। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৭২০ থেকে ৭৮০ টাকায়। সোনালি মুরগি ৪৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম প্রতি হালি ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ব্রয়লার ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল ও ডিম।
হাতিরপুল বাজারে ক্রেতা আব্দুল কাদির বলেন, অনেকে বলছেন দাম ঠিক আছে, অনেকে বলছেন বেশি। তবে আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জন্য এই দাম আসলে বেশিই। খেয়ে-পরে একটু ভালো ভাবে বেঁচে থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।