চুয়াডাঙ্গায় মাথা বিহীন উদ্ধার হওয়া মাদ্রাসাছাত্র আবির হুসাইনের কাটামাথা অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করার ২৪ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ১০টায় মাদ্রাসার পাশের একটি পুকুর থেকে মাথাটি উদ্ধার করে খুলনার একটি ডুবুরি দল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান।
নিহত আবির হোসাইন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের দুবাই প্রবাসী আলী হোসেনের ছেলে। সে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না আবিরকে। পরদিন বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে মাদ্রাসার অদূরে একটি আম বাগানের ভেতর থেকে তার মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর পরই গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হত্যাকান্ডের পর পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা থেকে র্যাবের ডগ স্কোয়াডের একটি স্পেশাল দল বুধবার দিনভর অভিযান চালিয়েও নিহত মাদ্রাসাছাত্রের মাথা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়।
অবশেষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও খুলনার ডুবুরি দল অভিযান শুরু করে মাদ্রাসার পাশের একটি পুকুরে। অভিযানের একপর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে উদ্ধার হয় আবির হুসাইনের মাথা। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, মাদ্রাসাছাত্রের হত্যার নেপথ্যে আমরা বেশ কিছু তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক গুজবের সঙ্গে এ হত্যার কোনো সম্পর্ক নেই। সুকৌশলে হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে দিতেই নিহত ওই ছাত্রের মাথা কেটে গুম করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, নিহত ওই ছাত্রকে দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। যৌন নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তাকে। এমনটিই উঠে এসেছে ময়নাতদন্তে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ জানান, দিনভর পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট কাজ করার পর আমাদের হাতে কিছু তথ্য আসে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে তথ্য পাওয়া যায় নিহত মাদ্রাসাছাত্র আবির হাসানের মলদ্বারে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ তথ্যের পর হাসপাতালে ছুটে যান জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানসহ তদন্তকারী দলগুলো।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের বর্ণনা দিয়ে মো. কলিমুল্লা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ওই ছাত্রকে দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতন চালানো হতো। নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপি দিতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
মাদ্রাসাছাত্রকে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামীম কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে সে রকমই মনে হয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা ডিএনএ টেস্ট ও নিহতের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকাতে পাঠিয়েছি।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে মাদ্রাসার পাঁচ শিক্ষককে। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বলাৎকারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে খুব কৌশলে হত্যা করা হয়েছে ওই মাদ্রাসাছাত্রকে। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে শরীর থেকে মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করে গুম করা হয়।