পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। অপরদিকে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে থাকায় উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
শনিবার (২০ জুলাই) বৃষ্টিপাত ও নদনদীর অবস্থা নিয়ে দেয়া প্রতিবেদনে সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গঙ্গা-পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদ-নদী ছাড়া অন্যান্য সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উজানের প্রদেশগুলোতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রক্ষপুত্র-যমুনা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীগুলোর পানি কমতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানির বৃষ্টি ব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘটায় পদ্মা নদী সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, রাজবায়ী, ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।আগামী ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলেও জানান প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, যমুনা নদীর পানি ফুলছড়িতে ১২৯ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে ১৩৭ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ১১৬ সেন্টিমিটার, কাজিপুরে ১১১ সেন্টিমিটার ও সিরাজগঞ্জে ৯৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে এবং পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ ও ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ, কুশিয়ারার পানি শেরপুর-সিলেট, পুরনো সুরমার পানি দিরাই, তিতাসের পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মেঘনার পারি চাঁদপুর, ধরলার পানি কুড়িগ্রাম, ঘাঘটের পানি গাইবান্ধা, করতোয়ার পানি চকরহিমপুর, আত্রাইয়ের পানি বাঘবাড়ি, ধলেশ্বরীর পারি এলাশিন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের ভেতরে ও উজানের বেসিনে (আসাম) ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথমার্ধে দেশের উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সবকয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে জামালপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ভয়াবহ রূপ দিয়েছে, যা উত্তর-মধ্যাঞ্চলের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ মানিকগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যমুনা নদী বাহাদুরাবাদ ও ফুলছড়ি পয়েন্টে এবং তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পূর্বে রেকর্ডকৃত সবোর্চ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থি অপরিবর্তীত হলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুন। নেই খাদ্য। নেই বিশুদ্ধ পানি। নেই শৌচোকর্ম সারার সু-ব্যবস্থা। প্রকৃতির ডাক এলেই চরম ভোগান্তিতে পড়ে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। কারো ঘরে রান্না হলেও নেই তরকারী। ফলে শুকনো ভাত লবণ চটিয়ে খাওয়া ছাড়া কোন গতি নেই। এ দর্ভোগ জেলার প্রায় সাড়ে ৮লাখ বানভাসি মানুষের।
চিলমারী উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবি স্থানীয়দের। চিলমারী উপজেলা পরিষদের ৫বারে নির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বীরবিক্রম অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বলেন, তাঁর জানামতে গত ১০০বছরে এত পানি চিলমারীর মানুষ দেখে নাই। বিরাজ করছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। সর্বত্র পানি আর পানি। উপজেলার ৩০হাজার ৯৩৯পি পরিবারের মধ্যে ৩০হাজারের উপর পরিবার পুরোপুরি পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত ২৪ ঘন্টায় পানির তোড়ে অষ্টমীর চর ইউনিয়নের ৭৮টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। শনিবার নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে খামার বাঁশপাতারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রমনা রেলস্টেশনের উত্তরে রেললাইনের নীচ থেকে ১৫০মিটার এলাকার মাটি পানির তোড়ে সড়ে যাওয়ায় রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়েগেছে। মানুষ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দিতে পারছেনা ল্যাট্রিন ডুবে যাওয়ায়। একই ভাবে সকল টিউবওয়েল এখন পানির নীচে। ফলে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে। সবার ঘরে খাবার নেই। শুকনা খাবারের তীব্র সংকট রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় ১১০মে.টন চাল ও ২০০প্যাকেট শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
চিলমারী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আব্দুস সালাম জানান, বন্যা স্থায়ী হওয়ায় ইতিমধ্যে পানিবাহিত রোগ-ব্যাধির সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪শিশু ও এক বয়স্ক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে চিলমারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ১৩শিশু, ৭নারী ও ৭ পুরুষ রোগি। এ সংখ্যা ক্রমেই বুদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি জানান।
চিলমারী উপজেলা সদরের থানাহাট ইউনিয়নের খড়খড়িয়া গ্রামের আবুহার আলী (৫০) বলেন, স্ত্রী ছেলে মেয়েসহ ৬জনের পরিবার নিয়ে গত ৭দিন ধরে পানিবন্দি জীবন। আজ পর্যন্ত সরকারি কিংবা বে-সরকারি ভাবে কোন খাদ্য সহায়তা মেলেনি। ঘরে চালের যা সঞ্চয় ছিল তাদিয়ে অল্প অল্প করে রান্না করলেও ছিলনা কোন তরিতরকারি। বলা চলে শুধু মাত্র লবণ চটকিয়ে কোন রকম জীবন বাঁচানো মাত্র। সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সে। ভট্টপাড়ার জাবের হোসেন (৩৫) শ্রমজীবী মানুষ। কাজ নেই ঘরে খাবার নেই। তার উপর সাতদিন ধরে পানিবন্দি জীবন। ৪জনের সংসার নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। অর্ধাহারে দিন কাটছে। তাঁর ভাগ্যেও ত্রাণ জোটেনি। একই অবস্থা চিলমারীর অধিকাংশ দুর্গত এলাকায়।
গণকমিটির কেন্দ্রিয় সভাপতি কলামিষ্ট নাহিদ নলেজ বন্যার ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করে বলেন, এ অঞ্চলের মানুষদের বাঁচাতে হলে সরকারকে এখনই চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষনা করা হোক। কারণ এ তিনটি উপজেলার ৯৫ভাগ মানুষ এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে বানের পানিতে ভাসছে। ঘরে ঘরে খাদ্যের জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। ঘটছে মানবিক বিপর্যয়। সাধারণ মানুষের একমাত্র সম্বল গবাদিপুশুও রক্ষা করতে পারছে না। কারণ গবাদিপশু রাখার জায়গা নেই। নেই গো-খাদ্য।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর। বন্যায় এক হাজার ২৪৫কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কি.মি বাঁধ ও ৪১টি ব্রীজ/কার্লভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নলকুপ ক্ষতিগস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি। প্রায় ২লক্ষাধিক গবাদিপশু পানিবন্দি।
শনিবার বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৮০সে.মি ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১১ সে.মি কমে গিয়ে ৮৩ ৪৫সে,মি এবং ধরলা নদীল পানি ব্রীজ পয়েন্টে ৪৫ সে.মি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা দুর্গতদের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে বলে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা:এসএম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করছেন। বেসরকারি এনজিওগুলো এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছে। ডোনার সহায়তা না করায় তারা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অপরদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে এগিয়ে আসলেও তা একেবারেই নগন্য। ফলে বানবাসীদেরর মধ্যে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান জানান, সকল বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৮শ’ মে.টন জিআর চাল, ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ হাজার ৪২৮ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুর:ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে।উপজেলার চার ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ হতে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য গাজীরটেক ইউনিয়নের ৪০ পরিবার ছাড়া পানিবন্দি পরিবারের সঠিক কোন তথ্য তাদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মৃধা বলেন, আমার ইউনিয়নের ৪ শত পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।
গাজীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: ইয়াকুব আলী বলেন আমার ইউনিয়নের ১৪ টি গ্রামের ১ হাজার মানুষ পানি বন্দি রয়েছে। গতকাল ৪০ টি পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরন করা হয়েছে। তবে সহায়তার পরিমান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
হরিামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমীর হোসনে খান বলেন এইচবিবি সহ কাঁচা প্রায় ৪ কি:মি: রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে হাট বাজারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে মানুষ।ছয়টি গ্রামের ২ হাজার ২শত পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান বলেন, অত্র ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের ৪ শত পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
সরেজমিনে শনিবার সকালে উপজেলার চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর গেপালপুর ও তার পার্শবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা যায় ঘরবাড়ী ছেড়ে স্ত্রী,সন্তান নিয়ে কেউ নৌকা যোগে আবার গবাদী পশু নিয়ে কেউ ছুটছে পানি ভেঙ্গে। সকলেই গন্তব্য উচু কোন নিরাপদ আশ্রয়। কেউ আবার মাচাপেতে তার উপরই রান্নাবান্নার কাজ সারছেন। বানের পানিতে দিশেহারা হয়ে পরেছে তারা। ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
চর গোপালপুর গ্রামরে বাসিন্দা হালিম চৌধুরী (৫৮) বলেন পানি বাড়ার পর পরিবারের সকলে চরকল্যানপুর স:প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আমি গরু গুলো নিয়ে বাড়ীতে ছিলাম। ঘরে পানি উঠার কারনে নৌকায় শুয়ে রাত কাটিয়েছি।কিন্তু যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে করে আর থাক সম্ভব না।
ওই গ্রামরে আরেক বাসিন্দা শেখ রহিম বলেন(৪৩) পরিবার নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তিনি বলেন ৯ দিন ধরে পানিতে ডুবে গেছে থাকা ও রান্না করার জায়গা। চিরা মুড়ি খেয়ে কোন রকমে পেট চালাচ্ছি।খুব কষ্টে আছি আমরা।
বন্যা কবলিত মানুষের ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আল সাইদ বলেন গাজীরটেক ইউনিয়নের ৪০ পরিবার ছাড়া আমাদের কাছে এখনও কোন তালিকা আসেনি। কাজেই বন্যা কবলিত পরিবারের সংখ্যা সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না। সহায়তার ব্যাপারে তিনি বলেন জেলা থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তবে তা এখনও আমাদের কাছে এসে পৌছায়নি।ত্রান সামগ্রী পৌছালে আমরা সামগ্রিক ভাবে ত্রান কার্যক্রম শুরু করবো।
এদিকে,ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে বন্যার্ত ৪০ পরিবারের মাঝে ত্রান হিসেবে শুকনা খাবার বিতরন করা হয়েছে।শুক্রবার দুপুরের দিকে উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের চর মৈজদ্দিন আশ্রয়ন প্রকল্প কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া এ সকল পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন সুলতানা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোশারফ হোসেন(ভিপি মুশা),মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা বেগম,ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আল সাইদ। প্রতি পরিবারকে শুকনা খাবারের সাথে যে সকল সামগ্রী দেওয়া হয় তার মধ্যে ৫কেজি চাল,১কেজি ডাল,১কেজি লবন,১লিটার তৈল,১কেজি চিড়া,৫ শত গ্রাম মুড়ি,বিস্কিট,মোমবাতি ও ম্যাচ রয়েছে।জানা যায় দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের বরাদ্যকৃত ত্রান সামগ্রী জেলা প্রসাশকের ত্রান তহবিল হতে প্রথম পর্যায়ে উপজেলার বন্যার্ত পরিবারের মাঝে বিতরন করা হয়।পর্যায়ক্রমে বন্যা দুর্গত প্রতি পরিবারের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হবে।
জামালপুর: জামালপুরে যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে হ্রাস পেতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাই, জিঞ্জিরাম, দশানীসহ সব নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদ সীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জামালপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার ইসলামপুর,দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ি, জামালপুর সদর ও বকশীগঞ্জ উপজেলার ৬১ টি ইউনিয়ন ও ৭ টি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব এলাকার সাড়ে ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। পানিবন্দী মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও উচু বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা চরম বিপাকে রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার বেশিরভাগ সড়ক ও রেললাইন ডুবে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বন্যার কারনে জেলার ১ হাজার ১০৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোপা-আমনের বীজতলা, আউশ ধান, পাট ও সবজি, ভুট্রাসহ ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। বন্যায় জেলার কয়েক হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যা দুর্গতদের মাঝে সরকারি ত্রাণ তৎপরতা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বানভাসীরা। কোথাও ত্রাণের খবর পেলে বানভাসী মানুষ সেখানে হুমড়ী খেয়ে পরছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে ৮৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৪ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি:শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নে পদ্মা নদীর পার ভাঙতে শুরু করেছে। এর মধ্যে উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি গ্রামের ভাঙনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে পদ্মা নদীর ভাঙনে উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি গ্রামের ভাঙনের বিলীন হয়েছে পদ্মাপাড়ের ১০ বিঘা ফসলি জমি। ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে ৮টি পরিবার। এদিকে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে নড়িয়া-জাজিরা সড়ক। পানি ঢুকে পরায় ৪টি বিদ্যালয়ের পাঠ দান সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়রা জানায়, পদ্মা নদীর শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ^র পয়েন্টে গত এক সপ্তাহে ১২০ সেন্টিমিটার পনি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে নদীতে ¯্রােতও বেড়েছে। আর এ কারনে নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডানতীর রক্ষা কাজে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ¯্রােতোর কারনে বালুবাহী নৌযান বাল্কহেড চলাচল করতে পারছেনা। এ কারনে বালু সরবরাহ না থাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা যাচ্ছে না। আর নদীর তীর উপচে পানি প্রবেশ করার কারনে প্রকল্পের দুটি অংশের সিসি ব্লক তৈরির কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। নড়িয়া-জাজিরা সড়কের মোক্তারেরচর এলাকায় দিয়ে পনিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়া ওই সড়কে জান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছারাও নড়িয়া উপজেলার নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকে পরায় শেরআলীমাদবর কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ঈশরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,টেবেকা গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর জপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
নাওডোবা ইউনিয়নের উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি গ্রামের শাহজাহান খানের বাড়ি থেকে শুরু করে সিরাজুল বেপারীর বাড়ি পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা ভাঙন প্রবণ। গত ১২ বছরে নদীভাঙনের কবলে পড়ে এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু এ বছর এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত পাঁচ দিনে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে গেছে গ্রামটির সিরাজুল বেপারী, ইদ্রিস বেপারী, মজিবর ছৈয়াল, আবু কালাম মৃধা, সজল তালুকদার, শাহজাহান খা, রুবেল বেপারী, নুরু বেপারী ।
নড়িয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল আলম বলেন, নড়িয়ার চারটি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পরায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় গুলোর পাঠদান সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ঞ সরকার বলেন, পদ্মার নদীর পানি প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক দিনে পদ্মার পানি সুরেশ্বর পয়েন্টে ১২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনো বিপদ সিমা অতিক্রম করেনি। নদীর পারের কিছু নি¤œাঞ্চালে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সে সব এলাকা পর্যবেক্ষন করে ভাঙন রোধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।