জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবনাবসান ঘটেছে।গত ১০ দিন ধরে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা রোববার সকাল পৌনে ৮টায় তার মৃত্যুর ঘোষণা দেন।এরশাদের রাজনৈতিক ও প্রেসসচিব এবং জাতীয় পার্টির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সুনীল শুভ রায় এ খবর করেছেন।আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম খান বলেন,রোববার সকাল পৌনে ৮টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
এরশাদেও মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,স্পীকার ড.শিরিন শারমিন চোধুরী এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক শোকবার্তায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
৯০ বছর বয়সী এরশাদ রক্তের ক্যান্সার মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন; শেষ দিকে তার ফুসফুসে দেখা দিয়েছিল সংক্রমণ, কিডনিও কাজ করছিল না।ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের শনিবার বলেছিলেন, এরশাদের কোনো অঙ্গ আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না।
প্রতিদিন ডাকলে চোখে মেলে তাকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আজ তা করেননি। আসলে তার বয়স হয়েছে। বয়সের কারণে যে উন্নতি হওয়ার কথা তা হচ্ছে না।বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র এরশাদ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় আশির দশকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আট বছর দেশ শাসন করে গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের আগের সরকারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বপালনকারী এরশাদ বর্তমান সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বে ছিলেন।এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সিএমএইচে ছুটে যান। তার সঙ্গে ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদও (শাদ এরশাদ) ছিলেন।
এরশাদের আরেক ছেলে এরিক এরশাদ রয়েছেন বারিধারায় তার বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে। এরিকের মা বিদিশার সঙ্গে প্রায় দেড় দশক আগে এরশাদের বিচ্ছেদ ঘটে।গত কয়েক বছর ধরেই স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যায় ছিলেন এরশাদ। গত বছরের শেষ ভাগে সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসার পর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে খুব একটা দেখা যায়নি তাকে। এই সময়ে নিজের সম্পত্তি ট্রাস্টে দিয়ে যান তিনি।
অসুস্থতার কারণে ভাই জি এম কাদেরকে উত্তরসূরি ঘোষণা করে তাকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও বসিয়ে যান এরশাদ; যা নিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশনের সমর্থকরা রুষ্ট ছিলেন বলে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
গত ২২ জুন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এরশাদকে সিএমএইচে নেওয়া হলে রাখা হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে।
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক অনেক ধারা সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত এরশাদ। ৯০ এর গণআন্দোলনের সময় তাকে নিয়েই বিশ্ব বেহায়া চিত্রকর্মটি এঁকেছিলেন শিল্পী কামরুল হাসান।
আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারীদের নিয়ে কেলেঙ্কারি, রাজনীতিতে একের পর এক ‘ডিগবাজি’ দিয়েও আলোচিত ছিলেন তিনি।তবে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের কাছে এরশাদ ছিলেন নায়কসম; তারা পল্লীবন্ধু হিসেবেই ডাকতেন তাকে।এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে। অবিভক্ত ভারতে শিশুকাল কুচবিহারে কাটে তার। ভারত ভাগের পর তার পরিবার চলে আসে রংপুরে; পেয়ারা ডাকনামে পরিচিত এরশাদের কলেজের পড়াশোনা চলে রংপুরেই।
এদিকে, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের প্রথম জানাজা আজ রোববার বাদ জোহর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় ইমামতি করেন কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম আহসান হাবীব। এরপর তাঁর মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে নেওয়া হয়।
বিগত শতাব্দীর আশির দশকে সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে টানা আট বছর রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন এরশাদ। নব্বইয়ের দশকের শেষে এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেন এই সামরিক শাসক।
জানাজায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, ছেলে শাদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, বিমান বাহিনী প্রধান এবং বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেমন এমপিও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম জানাজায় অংশ নেন।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সাহিদুর রহমান টেপা, হাবিবুর রহমান, এস এম ফয়সল চিশতী, আজম খান, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, আবদুস সবুর আসুদ, এ টি ইউ তাজ রহমান, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, মিজানুর রহমান, রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়াসহ জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী জানাজায় অংশ নেন।
পরবর্তী কর্মসূচি: বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দলের পক্ষ থেকে সিএমএইচে গণমাধ্যমের কাছে এরশাদের ব্যাপারে পরবর্তী কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন। এ সময় সেখানে জাতীয় পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আজ প্রথম জানাজা শেষে এরশাদের মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়। আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিরোধীদলীয় নেতার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এরশাদের মরদেহ রাখা হবে দলীয় নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য। এরপর বাদ আসর বায়তুল মোকাররমে আবার একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ ফের সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে।
বৃষ্টির কারণে আগামীকাল এরশাদের মরদেহ রংপুর নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব। তিনি আরো বলেন, পরশু অর্থাৎ মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে করে এরশাদের মরদেহ রংপুর নিয়ে যাওয়া হবে। বাদ জোহর রংপুর জেলা স্কুলের মাঠে এরশাদের শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিনই এরশাদের মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে এনে সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি আরো জানান, পরদিন অর্থাৎ বুধবার রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বর্ণময় জীবন: বর্ণময় চরিত্রের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি চট্টগ্রামের পূর্ব বাংলার রেজিমেন্টাল ডিপোর উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে কোয়েটায় মর্যাদাপূর্ণ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে উন্নত কোর্স সম্পন্ন করেন। শিয়ালকোটে একটি ব্রিগেডের সঙ্গে সেবা করার পর তাঁকে ১৯৬৯ সালে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড এবং ১৯৭১ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে এরশাদ পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। পরে তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল পদে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালে তাঁকে সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের ফলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেপ্তার হন। ছয় বছর কারাভোগের পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন।
কারাগারে থেকে এরশাদ ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে নিজ জেলা রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন।
গণঅভ্যুত্থানে পতনের পরও এরশাদের দল জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদে উল্লেখযোগ্য আসনে বিজয়ী হয়। কমবেশি করে একই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল পরবর্তী সময়ের সাধারণ নির্বাচনেও। ২০০৬ সালে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দল বিরোধী দলের ভূমিকায় উঠে আসে।
ক্ষমতায় বসার পর প্রথমে জনদল নামে একটি দল এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল, যা ছিল তার রাজনীতিতে নামার প্রথম ধাপ। এরপর বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি, মৃত্যু পর্যন্ত এই দলটির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতেই।
এরশাদের নয় বছরের শাসনকালে অবকাঠামোর উন্নতির দিকটিই তার সমর্থকরা বেশি করে দেখান, তবে অবাধ দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরিতে এরশাদের সেদিকে আগ্রহ ছিল বলে সমালোচকরা বলেন।
উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য কৃতিত্ব নেন এরশাদ; কিন্তু তাও তার রাজনৈতিক অভিলাষ বাস্তবায়নের ধাপ হিসেবেই দেখেন সমালোচকরা।
এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী এনে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যুক্ত করেন, যা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র বদলে দেয় বলে সমালোচনা করলেও এরপর সংবিধান সংশোধন হলেও স্পর্শকাতর এই বিষয়টি কেউ স্পর্শ করতে চাননি।
ঢাকার বাইরে হাই কোর্টের বেঞ্চ স্থাপনসহ আরও নানা পদক্ষেপে বিতর্কিত ছিল এরশাদের ক্ষমতার যুগ। তখন গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাও ছিল সীমিত।
এর মধ্যেও এরশাদের সময়ে স্বাস্থ্য নীতি প্রশংসা পায় সমালোচকদেরও; তার গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্প ও পথশিশুদের জন্য পথকলি ট্রাস্টও ছিল আলোচিত।
এরশাদের সময়েই ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক, তবে ভারত-পাকিস্তান টানাপড়েনে তা কখনই কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে একের পর এক বিদেশ সফর নিয়েও সমালোচিত ছিলেন এরশাদ।
নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতে চাইতেন এরশাদ; ক্ষমতায় থাকার সময় তার তার লেখা কবিতা-গান রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে শোনানো হত, তবে সেগুলো আদতে তার লেখা ছিল কি না, তা নিয়ে ছিল মানুষের সন্দেহ।দমন-পীড়ন দিয়ে নিজের শাসন বজায় রেখেছিলেন এরশাদ; তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৯০ সালে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাকে।
ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ বন্দি হন তখন, তার বিরুদ্ধে হয় অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা। কিন্তু তার মধ্যেই চমক দেখিয়ে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৫টি আসন থেকে বিজয়ী হন এরশাদ।
এরপর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টিতে জনধিকৃত এরশাদই একটি অবস্থান পেয়ে গিয়েছিলেন।
ওই সময় ৪২টির মতো মামলা হয়েছিল এরশাদের বিরুদ্ধে; তাকে বাগে আনতে এই সব মামলাগুলোর ব্যবহারও পরে দেখা গেছে। ওই সব মামলার একটিতে কেবল তার সাজা হয়েছিল।
এরশাদকে পুনর্বাসনে ক্ষমতায় যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকায় মনোবেদনা প্রকাশ করে শহীদ শামসুল আলম মিলনের মা সেলিনা আখতার বলেছিলেন, সারাবিশ্বে স্বৈরশাসককে দেশ ছাড়তে হয় নতুবা বিচারের মুখোমুখি করে কঠোর শাস্তি দিতে দেখা যায়। অথচ আমাদের এখানে স্বৈরশাসককে ছুড়ে না ফেলে ক্ষমতাসীন দলে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এটা কেবল বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে।
১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের শাসনামলে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান এরশাদ; দলের নেতৃত্বভার নেন স্ত্রী রওশন এরশাদের কাছ থেকে।
এরপর বিভিন্ন সময় নানা ভাগ হয় এরশাদের দল। মূল দল নিয়ে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেন তিনি। এরপর টানাপড়েন ও নানা অনুযোগ করলেও আওয়ামী লীগের কাছাকাছিই থেকেছিলেন এরশাদ।২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেন তিনি। নিজে হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতার আসনে বসেন তিনি। এই পদে থেকেই পৃথিবী থেকে চিরপ্রস্থান ঘটেছে তার।