ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর বুক চিরে জন্ম নেওয়া বিচ্ছিন্ন একটি চরের নাম চরসোনারামপুর। নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসহ অনেক কিছু থেকেই যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছে এই চরের মানুষরা। এখানকার মানুষের দু:খ-কষ্ট দেখে মনে হবে দারিদ্র্যই যেন তাদের মূল চেহারা। তবে শুধু দারিদ্রতার মাঝেই তাদের কষ্ট সীমাবদ্ধ নয়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই মেঘনা নদীর ভাঙ্গনের কারণে এই চরের মানুষ গুলোর কষ্টের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে চরের একটি বড় অংশ। পাশাপাশি হুমকির মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি জাতীয় গ্রীড লাইনের রিভার ক্রসিং টাওয়ার।
জানা যায়, প্রায় দুইশত বছর আগে আশুগঞ্জে মেঘনার নদীর বুকে জেগে উঠে চরসোনারামপুর গ্রাম। এক দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা। ভৌগলিক কারণে এই চরের অবস্থান মেঘনা নদীর মাঝখানে আশুগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত চরসোনারামপুর গ্রাম। ঘনবসতিপূর্ণ এই চরের এ গ্রামটিতে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস। দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করা এখানকার বাসিন্দারের অধিকাংশই জেলে পেশায় নিয়োজিত। মাছ বিক্রি আর নৌকা চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এখানকার মানুষরা। তবে বর্ষা মৌসুম এসে চরের এই মানুষগুলোর কষ্ট অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। বর্ষা এলেই মেঘনায় ভাঙ্গন শুর হয়। নদীর ভাঙন রোধে যদি কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে এই চরের অস্তিত্ব টিকে থাকাই দায় হয়ে যাবে। পাশাপাশি মেঘনার বুক থেকে হারিয়ে যাবে আরো একটি চর।
চরের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, গত কয়েকদিন টানা নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এর ফলে চরের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভাঙ্গনের মাত্রা আরো বেড়ে গেলে চরে বসবাস করা সম্ভব হবে না। তাই তারা চর রক্ষার জন্য দ্রুত একটি বাঁধ ও নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
চরসোনারামপুর পরির্দশনে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন। তিনি চলতি সাপ্তাহে সরজমিনে চরসোনারামপুর ভাঙ্গনকৃত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সরাসরি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে সচিব কবির বিন আনোয়ার’র সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন। ভাঙ্গনের সামগ্রিক বিষয়টি তাকে তিনি অবগত করেন। এই সময় পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে সচিব কবির বিন আনোয়ার দ্রুত ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানকে তাৎক্ষনিক নির্দেশনা প্রদান করেন। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ৫ লাখ টাকার বালু দিয়ে ভাংগন এলাকায় বস্তা ফেলানোর জন্য কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। তবে এই ৫ লাখ টাকার বালু দিয়ে কিছুই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
এই ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজিমুল হায়দার জানান ঘটনাস্থল আমি ও জেলা প্রশাসক মােহাদয়সহ পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক ভাবে ভাঙ্গন রোধে চরটি রক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন হচ্ছে। পাশপাশি স্থায়ী বাধঁ নির্মাণে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হবে।
আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুর রহমান জানিয়েছেন, চর ভাংলেও টাওয়ারের কোন ক্ষতি হবে না। কারন এটি মাটির নিচ থেকে ফাউন্ডেশন নিয়ে করা হয়েছে। তাই এটি ভেঙ্গে পড়ার কোন সম্ভাবনা নাই।