উজানে ভারী বর্ষণের কারণে দেশের নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ২৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত দশ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র শনিবার (১৩ জুলাই) এসব তথ্য জানিয়ে বলছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। এতে মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সকাল ৯টায় সর্বশেষ তথ্য দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং সংলগ্ন ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উওরাঞ্চল, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।এতে আগামী ৭২ ঘণ্টায় সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদী সারিয়াকান্দি এবং কাজিপুর পয়েন্ট বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুর বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী, সাঙ্গু, ধরলাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়াও আগামী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট,চট্টগ্রাম,কক্সবাজার, বান্দরবান, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
আরিফুজ্জামান জানান,বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণাধীন ৯৩টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৭৯টিতে এবং কমেছে ১১টি পয়েন্টে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ২৩টি পয়েন্টে।এরই মধ্যে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ওই অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
বগুড়া: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কয়েকদিন ধরে চলা বর্ষণে বেড়েই চলছে যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি। যমুনার পানির তীব্র স্রোতে ইতোমধ্যেই বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার একটি ইউনিয়নের প্রায় দেড়শ’র মতো পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে।এছাড়া বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে চর ও নদী তীরবর্তী জমিতে লাগানো কৃষকের আউশ, পাট, রোপা আমান, বীজতলাসহ শাক-সবজির ক্ষেত।
শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও-ভারপ্রাপ্ত) সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এখান থেকে সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী, করণীয় ঠিক করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অতি শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার ও চাল-ডাল বিতরণ করা হবে।বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, দুপুরে যমুনার নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বাঙালি নদীর পানি বাড়লেও এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
এদিকে, যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় উপজেলার সারিয়াকান্দি সদর, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল, চালুয়াবাড়ী, চন্দনবাইশা, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, কামালপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও যমুনা তীরবর্তী এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।এতে প্রায় দেড়শ’র মতো পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে। এছাড়া ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি করে মাদ্রাসা ও উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকেছে বন্যার পানি।
উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তার ইউনিয়নের সুজানের পাড়ার ২৫টি পরিবার, উত্তর হাটবাড়ীর ২০টি, বহুলাডাঙার ২০টি, উত্তর শিমুল তাইড়ের ৩০টি, ভাঙরগাছার ১৫টি, বিরামের পাঁচগাছী গ্রামের ৩০টি পরিবারসহ প্রায় দেড়শটির মতো পরিবার ইতোমধ্যে গৃহহারা হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
লালমনিরহাট: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বন্যার পানিতে শ্রেণিকক্ষ ডুবে যাওয়ায় ৩৪টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটর। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সে. মি) বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ৩৫ সে. মি. ও রাত ৯টায় ৪৪ সে. মিটার এবং মধ্যরাতে আরো বেড়ে গিয়ে শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শনিবার দুপুরের দিকে কমতে শুরু করে পানি প্রবাহ। যা বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) দিনগত মধ্যরাতে পানির তোড়ে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী তালেব মোড় এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে হাতীবান্ধা উপজেলা শহরে বন্যার পানি প্রবেশ করে। বন্যায় প্লাবিত হয় নতুন নতুন এলাকা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানিববন্দির সংখ্যা।
ভারতের গজল ডোবা ব্যারেজে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ওই ব্যারেজের গেট খুলে দেয়ায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে বলে দাবি করেছে ডালিয়া ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষকে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত ছয় দিনের ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় প্রায় ২০/২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নৌকা বা ভেলা ছাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বন্যা কবলিত মানুষের। নৌকা পর্যাপ্ত না থাকায় চলাচলে বেশ সমস্যায় পড়েছে তারা। ধেয়ে আসছে পাহাড়ি ঢল। এতে বড় সমস্যায় পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা।
এ বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী,কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট-মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শুক্রবার ও শনিবার সকাল পর্যন্ত তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যাও বেড়েছে।
পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি ব্রিজ-কালভার্ট ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। আদিতমারীর তিস্তার তীরবর্তী মহিষখোচা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি কুটিরপাড়, রজবপাড়া, অংশে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একই এলাকার কুটিরপাড় বালুর বাঁধ ও স্প্যার বাঁধ দু’টি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোন মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে বলে স্থানীয়রা শঙ্কিত। বন্যায় ভেসে যাচ্ছে শত শত পুকুরের মাছ। নষ্ট হয়েছে চাষিদের বাদাম, ভুট্টা ও সবজিসহ নানান ফসল। পানি প্রবাহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তিস্তার তীরবর্তী মানুষ।
পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার ৫টি উপজেলার ৩৪টি বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৬টি ও উচ্চ বিদ্যালয় ৮টি। কয়েকটি বিদ্যালয়ে বন্যার্তরা আশ্রয় নেওয়ায় সেখানেও পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার ২৬টি বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমান বলেন, জেলার ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি নেমে গেলে বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ মধ্যরাত থেকে সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুরের পর থেকে কমতে শুরু করে। বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ভারতের গজলডোবা ব্যারেজে পানি প্রবাহ বিপদসীমা অতিক্রম করায় ক্রমেই বাড়েছে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ।
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বেড়েছে। মাইনী নদীর পানি বাড়ায় দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে। পানিবন্দি এলাকার মানুষ রয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।দীঘিনালার মেরুং এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় রাঙামাটির পর্যটন স্পট সাজেক ভ্রমণে সতর্কতাজারি করে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করছে স্থানীয় প্রশাসন।এদিকে, শনিবারও (১৩ জুলাই) সকালে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। তবে চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় জেলা সদর, পানছড়ি, মহালছড়ির নিচু এলাকা থেকে পানি সরে গেছে।
টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ির মধুপুর, শালবাগান, জিরোমাইল, ইসলামপুরে ছোট আকারে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহত না হলেও গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দীঘিনালায় পাহাড় ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে।বৈরী আবহাওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
গাইবান্ধা: টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, যমুনা, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে তিস্তা ও ঘাঘট নদীর শহর পয়েন্টে পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।তিনি বলেন, সকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা ও ঘাঘটের শহর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।এদিকে নদ-নদীর পানি বাড়ার ফলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর তীরবর্তী অন্তত ২০টি গ্রাম ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ। এসব এলাকার কাঁচা রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে গেছে ধানের বীজতলা, পাট, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের জমি। পানির তীব্র স্রোতের কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন।
এরই মধ্যে সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদী তীরের শতাধিক পরিবারের মানুষ হারিয়েছেন ভিটে-মাটি। সবচেয়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে সুন্দগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া, বেলকা, সদরের কামারজানি, গোঘাট, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি, উড়িয়া ও গজারিয়া।
এসব এলাকায় হুমকির মুখে রয়েছে শতশত বসত-ভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অনেকে সাধ্যমতো তাদের সহায়-সম্বল নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন।
জামালপুর: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরে গত ১২ ঘণ্টায় যমুনার পানি বেড়ে বর্তমানে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নতুন এলাকা।
যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক গেজ রিডার আব্দুল মান্নান জানান, বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকায় দুপুর ১টায় ১৯.৮৭ সেন্টিমিটার পানি পরিমাপ করা হয়েছে। এই পয়েন্টে স্বাভাবিক পানির উচ্চতা ১৯.৫০।
এদিকে উজানে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পারিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বাড়ার ফলে বকশীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এর আগে সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। শনিবার বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে পড়েছে দেওয়ানপাড়া গ্রামের অন্তত ৩০টি বসতভিটা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা আশপাশের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জামালপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি)আহমদ কবীর জানান,জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত জামালপুরের বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারন করেনি। শনিবার দুপুরে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে দুর্গত এলাকার জন্য ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হবে।