প্রভাবশালী আফগান কর্মকর্তাদের সঙ্গে তালেবান নেতাদের বৈঠকে অবশেষে শান্তির রোডম্যাপ খুঁজে পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন মধ্যস্থতাকারীরা। ‘ইসলামিক গঠনতন্ত্রের অধীনে আফগানিস্তানে বেসামরিক মানুষ হতাহতের সংখ্যা শূন্যে নামি আনা ও নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছেন দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা। এতে, দেশটিতে ১৮ বছর ধরে চলমান সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন বাহিনী ২০০১ সালে আফগানিস্তান থেকে ক্ষমতাচ্যুত করে তালেবানদের। এরপর থেকেই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ চলে আসছে। এতে প্রায় প্রতিদিনই বহু সামরিক-বেসামরিক লোক হতাহত হচ্ছেন। এ দ্বন্দ্ব-সংঘাত অবসানে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসলেও, এতদিন কোনো সমাধানে আসতে পারেনি আফগান ও তালেবান প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) শুরু হতে যাচ্ছে ৭ম দফা আলোচনা। তবে, এ আলোচনায় শান্তিচুক্তির ব্যবস্থা চূড়ান্ত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সেটি হলে, আফগানিস্তান আর কখনোই সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি না হওয়ার শর্তে, সেখান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করা হতে পারে। যদিও, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা না করা পর্যন্ত আফগান সরকারের সঙ্গে সরাসরি কোনো চুক্তিতে রাজি নয় তালেবানরা।
কিন্তু, সম্প্রতি কাতারে দুই দিনব্যাপী এক সম্মেলনে এ সম্পর্কিত চুক্তির দ্বার খুঁলে গেছে বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী জালমে খালিলজাদ। সোমবার (৮ জুলাই) আফগান-তালেবান বৈঠককে অনেক বড় সাফল্য বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বৈঠকে অংশ নেওয়া আফগান ওমেনস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক ম্যারি আকরামি বলেন, এটা কোনো সমঝোতা চুক্তি নয়, তবে আলোচনার ভিত্তি তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, দু’পক্ষই রাজি হয়েছে।
কথিত ওই রোডম্যাপ তৈরিতে যেসব শর্ত দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম, বিতাড়িত মানুষের প্রত্যাবাসন ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো যেন সেখানে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করে, সেটি নিশ্চিত করা। আফগানিস্তানের মানুষ প্রতিদিনই কষ্ট পাচ্ছে বলে স্বীকার করেছে দুইপক্ষই।জাতিসংঘের তথ্যমতে, আফগানিস্তানে গত পাঁচ বছরে সংঘর্ষে অন্তত ৪৫ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন। এ বছরের প্রথম তিন মাসেই প্রাণ হারিয়েছেন ৫শ ৮১ জন সাধারণ নাগরিক, আহত হয়েছেন অন্তত ১২শ’ জন।
সাধারণ মানুষ হতাহতের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণার মাত্র এক দিন আগেই গজনিতে একটি সরকারি ভবন লক্ষ্য করে তালেবানের গাড়িবোমা হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে বেশ কয়েকটি স্কুলপড়ুয়া শিশু।