মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডের পর সোনাগাজী থানার ওসিকে বাঁচাতে চিঠি লিখে আলোচনায় আসা ফেনীর সেই এসপি এস.এম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে ফেনী থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। রোববার বিকেলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অবশেষে এসপি-ওসি ও দুই কন্সটেবলসহ প্রত্যাহার হলেন অভিযুক্ত ৪ জন।
সারা দেশে আলোচিত নুসরাত হত্যাকান্ডের পর ইতোমধ্যে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডে এস.এম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে গুঞ্জন ছিল। শিগগিরই তাকে বরখাস্ত করা হবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল। পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নুসরাত হত্যার পর পুলিশ সদর দফতরের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির প্রতিবেদনে কিছু বিচ্যুতি ও দায়িত্ব অবহেলার বিষয় উঠে আসে। এসব বিষয়ে এস.এম জাহাঙ্গীর আলম সরকারের জবাব সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ফেনীর পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাকেও একটি ইউনিটে সংযুক্ত করা হবে। বিষয়টি বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে।তিনি আরও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অভিযুক্ত এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় এবং এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইকবাল আহাম্মদকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও নেয়া হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। ‘বদলি ও সংযুক্তের বিষয়টি ভিন্ন’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে দূরবর্তী বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্তি কোনো বদলি নয়। এটি শাস্তি প্রক্রিয়ার একটি অংশ। সংযুক্তিকালে তাদের কোনো দায়িত্ব প্রদান করা হয় না।
প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে নুসরাত জাহান রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। সে সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুসরাত। ওই ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
পরবর্তীতে সোনাগাজী থানায় অভিযোগ নিয়ে যাওয়া নুসরাতের সঙ্গে ওসি মোয়াজ্জেমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নুসরাতের মৃত্যুর পরদিন ‘নুসরাতের পরিবারকে অসহযোগিতার অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয় ওসিকে। এরপর পুলিশ সদর দফতরের উচ্চপর্যায়ের কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ী চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।