বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঘোষিত ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে বিতর্কিত ও অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা। একপর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাতে হামলা চালিয়েছে সদ্য পদপ্রাপ্তরা। এতে ছাত্রলীগের হল কমিটির সাবেক নেতাসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বিকেলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে যান পদবঞ্চিত এসব নেতাকর্মীরা। পদবঞ্চিত এসব নেতাকর্মীরা সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের অনুসারী। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন সদ্য পদপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা। মধুর ক্যান্টিনে মুখোমুখি অবস্থান নেন পদবঞ্চিত ও পদপ্রাপ্তরা।
পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন শুরু করতে গেলে পদপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা স্লোগান দিলে সংবাদ সম্মেলন শুরু করতে বাধা পায় পদবঞ্চিতরা। এই সময় পদপ্রাপ্তদের মধ্যে থেকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইনকে ‘শিবির’ বলে আখ্যায়িত করেন। এটা শুনে জাকিরের অনুসারীরা সংবাদ সম্মেলন রেখে দাঁড়িয়ে এই কথার প্রতিবাদ জানান। এ সময় সংবাদ সম্মেলনের ব্যানার ছিড়ে ফেললে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। ছাত্রলীগের সদ্য পদ পাওয়া যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান হামলার নেতৃত্ব দেন।
একপর্যায়ে চেয়ার ছুড়ে মারতে থাকে পদপ্রাপ্তরা। এতে পদবঞ্চিত ১০ নেতাকর্মী আহত হন। হামলায় আহত হন ছাত্রলীগের সাবেক উপঅর্থ সম্পাদক ও ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক তানভীর ভুঁইয়া শাকিল, ডাকসুর সদস্য ও কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীন, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক ও রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার। এ সময় চেয়ারের আঘাতে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশার মাথা ফেটে যায়। পরে আহত অবস্থায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই বিষয়ে আরিফুজ্জামান আল ইমরান বলেন, ‘হামলায় আমি অংশ নেইনি। তবে আমি মধুর ক্যান্টিনে ছিলাম। সেখানে সংবাদ সম্মেলনে হল কমিটির পদ-প্রত্যাশীরা অতি উৎসাহী জুনিয়ররা হাতাহাতি করেছে। আমরা যারা সিনিয়র ছিলাম তারা গিয়ে থামিয়েছি।’
ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতারা হলেন- সাবেক প্রচার সম্পাদক সাঈফ বাবু, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, সাবেক পরিবশ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বিপ্লব, ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক শেখ সাগর আহমেদ, স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আহমেদ, ক্রীড়া সম্পাদক চিন্ময় রায়, সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ, উপ-স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আরাফাত, সাবেক উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ইমদাদ হোসেন সোহাগ, উপ-প্রচার বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার রবি, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজিব, সাবেক সদস্য তানবীর হাসান সৈকত, জসিমউদদীন হলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান, জগন্নাথ হলের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু হলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান, ফজলুল হক হলের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিম, সাধারণ সম্পাদক এহসান পিয়াল, শহীদুল্লাহ হলের সভাপতি সাকিব হাসান, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন রিফাত, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানীসহ আরও অনেকে।
এছাড়াও ছাত্রলীগের মেয়ে হলগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা নেত্রীদের উপসম্পাদক পদ দেওয়ায় তারাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার, রোকেয়া হলের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার, কুয়েতমৈত্রী হলের সভাপতি ফরিদা পারভীন, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সভাপতি নিপু তন্বী, সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা প্রমুখ।
এই বিষয়ে সাবেক প্রচার সম্পাদক সাঈফ উদ্দিন বাবু বলেন, ‘ছাত্রলীগের গঠিত ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হয়েছে। যারা ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতে কোনোদিন থাকেনি তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিবাহিত ও বয়স না থাকাদের পদ দেওয়া হয়েছে। আমরা এই বিতর্কিত কমিটি মানি না। আমরা এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি আশা করছি।’
তিলোত্তমা শিকদার বলেন, ‘এমন কোনো কর্মসূচি ছিল না যেখানে আমি উপস্থিত হয়নি। অথচ আমাকে উপসম্পাদক করা হয়েছে। এটি আমাদের ত্যাগীদের জন্য অপমান। আমি পদ থেকে পদত্যাগ করছি। ক্ষোভ জানাতে গেলে আমাদের গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’