আগের তিনটি ধাপের মতোই নিরুত্তাপভাবে শেষ হয়েছে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণ। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পাঁচ বিভাগের ২২ জেলার ১০৭টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়। এর মধ্যে ছয়টি জেলার সদর উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হয়। ভোট গ্রহণ টানা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এবারের উপজেলা ভোটে বিএনপি, বামপন্থীসহ অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অধিকাংশ স্থানেই আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী নেতাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
এর মধ্যেও আজ সকালে ভোটের আগের রাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তির অভিযোগে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার চারটি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়। পরে দুপুরে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়, গোটা তিতাস উপজেলার ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া টাঙ্গাইলে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে এক প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। যশোরে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ভাতিজাকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই ধাপে ১২২টি উপজেলার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এ ধাপে ১৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিন পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফলে ওই ১৫টি উপজেলার ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।
এ ছাড়া আদালতের আদেশ প্রতিপালনের জন্য চারটি ও অবৈধ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে দুটি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। আর তৃতীয় ধাপ থেকে স্থানান্তর করা ছয়টি উপজেলা এ ধাপে যোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে ভোট হয়েছে ১০৭ উপজেলায়। এসব উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৪টিতে একক প্রার্থী থাকায় ভোট হয়নি।
যে ১৫ উপজেলায় সব পদে বিনা ভোটে নির্বাচিত:
ভোলা জেলার সদর, মনপুরা ও চরফ্যাসন, যশোরের শার্শা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ঢাকার সাভার ও কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লার লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, দেবীদ্বার ও চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও ফেনীর পরশুরাম।
৮৮ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত: চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৮৮ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭ প্রার্থী রয়েছেন।
স্থগিত ছয় উপজেলা: আদালতের নির্দেশনা ও নির্বাচন কমিশনের আদেশে খুলনার ডুমুরিয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার বরুড়া, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
যে ছয় উপজেলায় ইভিএম: পটুয়াখালী সদর, বাগেরহাট সদর, ময়মনসিংহ সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, ফেনী সদর ও কক্সবাজার সদর। এর মধ্যে ফেনী সদরে শুধু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। আর ময়মনসিংহ সদরে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারণে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়।
আরো যে ১০১ উপজেলায় ভোট: সাধারণ ব্যালট পেপারে আরো যে ১০১ উপজেলায় আজ ভোট সেগুলো হচ্ছে—পটুয়াখালীর দশমিনা, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, দুমকী ও বাউফল; ভোলার দৌলতখান, তজুমদ্দিন ও লালমোহন; বরগুনার সদর, আমতলী, বেতাগী, বামনা ও পাথরঘাটা; পিরোজপুরের সদর, ইন্দুরকানী, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, নেছারাবাদ ও নাজিরপুর; যশোরের সদর, বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর; খুলনার দীঘলিয়া, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, রূপসা, তেরখাদা, ফুলতলা ও বাটিয়াঘাটা; বাগেরহাটের মোংলা, মোরেলগঞ্জ, চিতলমারী, কচুয়া, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও শরণখোলা; ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, ফুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ফুলবাড়ীয়া, গৌরীপুর, নান্দাইল, মুক্তাগাছা ও ভালুকা; নরসিংদী সদর; মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, লৌহজং, শ্রীনগর, টঙ্গিবাড়ী ও গজারিয়া; নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, সোনারগাঁও ও রূপগঞ্জ; ঢাকার ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ; টাঙ্গাইলের সদর, ধনবাড়ী, মধুপুর, মির্জাপুর, দেলদুয়ার, নাগরপুর, ঘাটাইল, ভূঞাপুর, কালিহাতী, গোপালপুর, বাসাইল ও সখিপুর; কুমিল্লার তিতাস, চান্দিনা, মুরাদনগর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মেঘনা, ও হোমনা; নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, সুবর্ণচর ও চাটখিল; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর, সরাইল, আখাউড়া, আশুগঞ্জ, নাসিরনগর ও নবীনগর; ফেনীর ফুলগাজী, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা; দিনাজপুরের সদর; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ; কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া।
যে ৩৯ উপজেলায় বিনা ভোটে চেয়ারম্যান: যে ৩৯ উপজেলায় বিনা ভোটে চেয়ারম্যান সেগুলো হচ্ছে আগে উল্লিখিত সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ১৫টি উপজেলা ছাড়াও ভোলার দৌলতখান, পিরোজপুরের ভা-ারিয়া, যশোর সদর, খুলনার ফুলতলা ও বাটিয়াঘাটা, বাগেরহাটের সদর, মোংলা, চিতলমারী, কচুয়া, রামপাল ও শরণখোলা, ময়মনসিংহের সদর ও ফুলবাড়ীয়া, ঢাকার দোহার, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, নোয়াখালীর সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও সুবর্ণচর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, ফেনীর ফুলগাজী, সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া এবং দিনাজপুর সদর।
আজকের এ নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা চেয়ারম্যান পদে ৩৫১, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৩৩ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪০৬ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা নয় হাজার ৭৪০টি। ভোটার দুই কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ৭০৪ জন।