রাজধানীতে হঠাৎ করেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে ঝড়ো হাওয়া, বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এতে করে চরম ভোগান্তি পড়ে নগরবাসী।
ভোর বেলা মেঘলা আকাশ। এরপর দুপুরে ভ্যাপসা গরম। বিকালে আবার মেঘলা আকাশ। অবশেষে সন্ধ্যায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে ধূলিঝড়। পরে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি। তারপর শুরু হয় কালবৈশাখী, সঙ্গে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। এছাড়া মগবাজারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের দেয়াল ধসের ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া ঝড় চলে প্রায় ২০ মিনিটের মতো। এরপর হালকা থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে আরও কিছুক্ষণ। বেশিরভাগ রাস্তায় গাছের ছোট-ছোট ডাল-পাতা পড়ে বিছিয়ে রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ডিউটি অফিসার আতাউর রহমান জানান, ঢাকার মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালের একটি দেয়াল ধসের খবর পেয়ে সেখানে একটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ঝড়ো বাতাসে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্যুতির ঘটনা ঘটে । পূর্র্ব মাদারটেক, ধানমন্ডি,মগবাজার,সেগুনবাগিচা, মতিঝিল,পল্টন,গুলিস্থান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ,শাজাহানপুর,খিলগাঁও, পূর্বগোড়ান, মৌচাক, মুগদা,মান্ডা,বাসাবো, যাত্রাবাড়িসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে মৌসুমী লঘুচাপের প্রভাবে এই কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে। এই মৌসুমে এই ঝড় বৃষ্টি স্বাভাবিক।
সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ঢাকায় ঝড় কমে গেলেও এই ঝড় ঢাকা থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। মধ্যাঞ্চল থেকে আগামী আধ ঘ্ণ্টার মধ্যে এই ঝড়ের প্রভাব কেটে যাবে। মেঘ সরে যাবে। কিন্তু, ঝড়টি দক্ষিণ দিকে যত অগ্রসর হবে, ততই সেসব এলাকায় ঝড়ের প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হবে। রাত ১২টার মধ্যে ঢাকার আশ-পাশের এলাকাসহ পুরো মধ্যাঞ্চল ঝড়ের আওতামুক্ত হবে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশ-পাশের এলাকায় বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
বিকেল থেকে ঢাকায় মেঘলা আকাশ বিরাজ করছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলগুলোর উপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটারে বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ঝড়ো বাতাসের কারণে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। রোববার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়।
বিআইডব্লিউটিসি’র কাঁঠালবাড়ী লঞ্চ ঘাটের টার্মিনাল ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বিকেলে হঠাৎ করেই আকাশে মেঘ করে। পরে বাতাস শুরু হলে দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ো বাতাস শুরু হলে নৌরুটে চলাচলরত লঞ্চ ও ফেরি নদীর বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে আছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র কাঁঠালবাড়ী ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, বাতাস শুরু হবার আগে দুইটি ফেরি ঘাট ছেড়ে গেছে। তবে তা নদীতে নিরাপদে নোঙর করে আছে। আপাতত ফেরিতে গাড়ি লোড করা বন্ধ রয়েছে।