দেশের উন্নয়ন বৃদ্ধি এবং দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চিন্তা থেকেই বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) করেছিলেন। জাতির পিতা যে পদ্ধতিটা নিয়েছিলেন এটা যদি কার্যকর করা যেত তাহলে বাংলাদেশে আর কখনো জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ খেলতে পারত না। জনগণ তার মনমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারত। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতার সুফল যেন দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী । যারা দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এইটুকু আহ্বান করব- আজকের বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে যাদের অবদান রয়েছে তারা গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে আছে। আপনারা দেখবেন অনেকে তাদের ক্ষুদ্র অল্প একটু সম্পদ নিয়ে ও হাজারো মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাদের সহযোগিতা করে।
এই ধরনের যারা অবদান রাখে দেশের কল্যাণে, জনগণের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে, মানুষের জন্য আমি মনে করি তাদেরকে আমাদের খুঁজে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। তারা যে মানব কল্যাণে অবদান রেখেছেন সেজন্য তারা পুরস্কারপ্রাপ্তির যোগ্য।
শেখ হাসিনা বলেন,স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারি এবং আর্থসামাজিকভাবে যেন আমরা উন্নত হতে পারি, উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে যেন আমরা একটা মর্যাদা ফিরে পেতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং দেশবাসী তার সুফল পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বলল ও কুতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে এ অনুষ্ঠানে ১৩ জন ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজেকে ধন্য মনে করি যে গুনীজনদের আমরা সম্মান দিতে পেরেছি। তারপরও আমরা জানি, অনেকজন রয়ে গেছেন তাদেরকে আমরা দিতে পারছি না। স্বাধীন বাংলাদেশের বিনির্মাণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি দেশ গঠনে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এক সময় বাংলাদেশের কথা শুনলেই বিশ্ববাসী বলত দুর্ভিক্ষের দেশ, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। একটা অবহেলার চোখে দেখত।সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের খুব কষ্ট লাগত শুনতে। এই স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিনের সংগ্রাম জাতির পিতা করেছেন বা আমরাও ওই সময়ে ভুক্তভোগী। চড়াই উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন গেছে। আমরাও চলার পথে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি।
যারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে দেশকে স্বাধীন করেছেন, জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন, খুব স্বাভাবিকভাবেই সে দেশটাকে যদি কেউ সম্মানের সাথে না দেখেৃ সেটা আমাদের কষ্টের কারণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের এক দশকের চেষ্টায় দেশের অর্থনৈতিক প্রবুদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। মাথাপিছু আয় এ অর্থবছরে বেড়ে ১৯০৯ ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে বাংলাদেশের কথা শুনলে মানুষ সম্মানের চোখে দেখে, এটুকুই আমার তৃপ্তি। বাংলাদেশটাকে মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় নিয়ে আসেতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
রাজনৈতিক জীবনে সঙ্কটময় নানা ঘটনা পেরিয়ে আসার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের চলার পথ খুব সহজ ছিল না। একটা দৃষ্টান্ত দিতে পারি। একটা পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে যখন দুর্নীতির অভিযোগ আমার উপর আনা হল, আমার পরিবারের উপর আনা হলৃ।
অন্তত এইটুকু মানসিক শক্তি আমাদের ছিল যে এটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। দূর্নীতি কোথায় হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, সততাই হচ্ছে সবচেড়ে বড় শক্তি। আর এই সততার শক্তি ছিল বলেই এটা মোকাবেলা করতে পেরেছিলাম। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, ইনশাল্লাহ দাবায়ে রাখতে পারবে না।মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শফিউল আলমের পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।