জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশি কূটনীতিকদের ভুলে এজাত্তরে পঁচিশে মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি আফসোস করে বলেছেন, ২০১৫ সালে জাতিসংঘ যখন আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন দেশের কূটনীতিকরা পঁচিশে মার্চের গণহত্যার প্রেক্ষাপট সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেননি।জাতীয় প্রেসক্লাবে রোববার একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যা ও আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে মোজাম্মেল হকের এ মন্তব্য আসে।
জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মত ৯ ডিসেম্বরে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘটনা নেই। আমাদের মুখ্য সুযোগ ছিল ২০১৫ সালে। তখন জাতিসংঘের ভুল সংশোধনের জন্য কূটনীতিকরা সেভাবে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারেন নাই।তবে সরকার এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২৫ মার্চের গণহত্যা বিষয়ে সারা বিশ্বে জনমত গঠনে কাজ করছে বলে জানান মন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে যারা বিতর্ক তোলেন, তাদের সতর্ক করে দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, প্রতিষ্ঠিত সত্যকে যারা বিতর্কিত করতে চায় রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের বিচার হওয়া উচিৎ।
তারা ৩০ বছর ক্ষমতায় থেকে ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধকে পেছনে ঠেলে দিয়েছেন। তারা এখন শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শহীদের সংখ্যাকে বিতর্কিত করতে চায়। তারা কি এখন এক দুই করে শহীদের সংখ্যা গোণেন?একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে আওয়ামী লীগ সরকার গরিমসি করছে বলে কোনো কোনো মহলের যে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়েও কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রশ্ন উঠতে পারে, আওয়ামী লীগ কি করেছে? তারা ক্ষমতায় ছিল ৩০ বছর। তাদের শেকড় অনেক ভেতরে। তবে আমরা জনমত গঠন করতে পারলে কাজটি আমাদের জন্য সহজ হবে।
একাত্তরে মুজিবনগর সরকারের বিরোধিতায় খোন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমানের ভূমিকা প্রকাশে একটি ট্রুথ কমিশন গঠন করা হবে বলে জানান আ ক ম মোজাম্মেল হক।তিনি বলেন, বিসিএসে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাস নিয়ে ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, স্কুল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূস বন্দোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শহীদকন্যা নুজহাত চৌধুরী।
তিনি বলেন, পঁচিশে মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া খুব সহজ হবে না। একাত্তরে পাকিস্তানকে সহযোগিতা, সমর্থন জানিয়ে আসা আমেরিকা, চীন ও ইসলামিক উম্মাহর দেশগুলোর অমানবিক চেহারা যে তাহলে প্রকাশ হয়ে যাবে।একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর তখনকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমপর্ণের পর পাকিস্তান তাদের ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। প্রায় অর্ধশতক পর সেই সেনা কর্মকর্তাদের অপরাধের বিচারের জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ কে মো. আলী শিকদার।
তিনি বলেন, এ কাজটি না হলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কখনো স্বাভাবিক হবে না। সেই সঙ্গে ধর্মান্ধ ও উগ্রবাদী রাজনীতিতে পাকিস্তান যে মদদ দিচ্ছে, তাও বন্ধ করতে হবে।সম্প্রীতি বাংলাদেশের আয়োজনে এ সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বীরপ্রতীক ওয়াকার হাসান, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকার, সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, কবি আসাদ মান্নান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আহসান উল্লাহ বক্তব্য দেন।