রাঙামাটিতে ভোট শেষে ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম নিয়ে উপজেলা সদরে ফেরার পথে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে এক নির্বাচনি কর্মকর্তাসহ ছয় জন নিহত হয়েছেন। বাকিদের চারজন আনসার সদস্য।অন্যজনকে হামলাকারী হিসেবে সন্দেহ করছে স্থানীয়রা। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। সাজেক ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র থেকে তারা বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে চাঁদের গাড়িতে করে ফিরছিলেন।
সোমবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাঘাইছড়ির নয় মাইল এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।বাঘাইছড়ির থানার ওসি এমএম মঞ্জুরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও পোলিং অফিসার আমির হোসেন এবং আনসার ও ভিডিপির সদস্য আলামিন, মিহির কান্তি দত্ত, জাহানারা বেগম ও বিলকিস।পুলিশ জানায়, সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণ শেষে ব্যালটবাক্স নিয়ে ফেরার পথে উপজেলার নয় মাইল এলাকায় দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি সড়কে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন আনসার সদস্য ও একজন পোলিং অফিসার নিহত হন। আহত হন অন্তত পাঁচজন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদিম সারওয়ার। তিনি জানান, উপজেলার কংলাক, মাচালং ও বাঘাইহাটে উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় একসঙ্গে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলা নয় মাইল এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁদের ওপর ব্রাশ ফায়ার করে। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এর আগে রাতে ভোট গ্রহণ ও দিনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী হতে না দেওয়ার অভিযোগ এনে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস-সন্তু লারমা) চেয়ারম্যান প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা ও তিন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। আজ সোমবার সকাল ৮টায় বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরুর এক ঘণ্টা পরেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তাঁরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দুটি অংশের প্রভাবশালী দুই নেতা বড়ঋষি চাকমা ও সাবেক চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা মুখোমুখি হয়েছিলেন এবারের চেয়ারম্যান পদে। ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা অভিযোগ করেছেন, গত রাতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে এবং আজ সকাল থেকেই আমার সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়। জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) বিপুল বহিরাগত ও সশস্ত্র কর্মী এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভোট-সন্ত্রাস করলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলাম। আমার সঙ্গে আরো তিন ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীও নির্বাচন বর্জন করেছেন।
রাঙামাটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শফি কামাল বলেছেন, বাঘাইছড়িতে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও একাধিক ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা আমরা শুনেছি। অন্যান্য উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। কোথাও কোনো অভিযোগ পাইনি।এ ব্যাপারে বড়ঋষি চাকমার লিখিত অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।