নারীর অধস্তন অবস্থানের জন্য রাষ্ট্রই দায়ী বলে অভিযোগ করেছে ‘নারী পক্ষ’। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য কর্মসূচিতে এ অভিযোগ করা হয়। শুক্রবার (৮ মার্চ) রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নারী পক্ষের নেত্রীরা বলেন, বাংলাদেশ সংবিধান দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সমানভাবে ভোগের নিশ্চিয়তা দিয়েছে। কিন্তু সংবিধানেই আবার ব্যক্তি অধিকারের বিষয়টি উহ্য রেখে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮ (১) এ বলা হয়েছে. ‘ধর্ম গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী, পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। অথচ ২৮.২ অনুচ্ছেদে কেবল রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করার কথা বলা হয়েছে। ফলে ব্যক্তি অধিকারের ক্ষেত্রে নারী সবসময়ই বৈষম্যের শিকার।বক্তারা বলেন, নারীকে অধস্তন অবস্থানে রাখতে সংস্কৃতি, প্রথা ও ধর্ম প্রতিনিয়ত মুখ্য ভূমিকা রেখে চলেছে এবং এই অবস্থা টিকিয়ে রেখেছে রাষ্ট্র। সার্বিক বিবেচনায় নারীর অধস্তন অবস্থানের জন্য রাষ্ট্রই সম্পূর্ণ রূপে দায়ী।নারী নেত্রীরা বলেন, নারীর অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়ে তার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই রাষ্ট্র, বিশেষ করে সরকারের কাছে নারীপক্ষের দাবি রাষ্ট্র ও জনজীবনের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের সর্বস্তরেও নারী পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৬ অনুযায়ী মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব আইন বাতিল করা হোক। পাশাপাশি সরকারের অঙ্গিকারকৃত আন্তর্জাতিক সনদ ও দলিলসমূহ বাস্তবায়ন করে নারীকে সমমর্যাদার একজন নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানান নেত্রীরা।এদিকে দিবসটি উপলক্ষে সকালে নারীদের চালিত স্কুটি, রিকশা, সাইকেল ও সুসজ্জিত ট্রাক নিয়ে রোডশোর আয়োজন করা হয়। নারী পক্ষ কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে রোডশোটি মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মিলিত হয়। অনুষ্ঠানে নারী জাগরণ বিষয়ক বিভিন্ন গান পরিবেশন করেন বর্ণা চৌধুরী। এছাড়া আফরোজা সুলতানার নেতৃত্বে একটি নাটকও পরিবেশিত হয়।এদিকে, লাল র‌্যালি ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ১০৯ বছর উদযাপন এবং ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে নারী সংহতি।আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসকে স্মরণ করে ‘ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন-ভীতি রুখো’, ‘আসুন, নারীর আত্মমর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হই’- এই আহ্বানে জাতীয় প্রেসক্লাবে শুক্রবার (৮ মার্চ) লাল র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।নারী দিবস ও নারী সংহতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ বলেন, নারী সংহতি মানুষ হিসেবে নারীর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে শুরু থেকেই। পরিসংখ্যানে নারীর অবস্থানের অনেক উন্নতির কথা জানা যায়। কিন্তু বাস্তবে এত ক্ষমতায়নের মধ্যেও নারী-পুরুষের পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা কাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি।তিনি বলেন, বিভিন্ন কর্মস্থলে, গার্হস্থশ্রমে, কারখানায় নারীর কর্মঘণ্টা বেড়ে চলেছে কিন্তু কর্মপরিবেশের উন্নতি হয়নি। বরং মজুরি বৈষম্য আরও বেড়েছে এবং অধিক হারে শ্রমশোষণ হচ্ছে।নারী সংহতির প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক কানিজ ফাতেমা বলেন, ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, গণপরিবহনসহ সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারীর ওপর ঘরে-বাইরে কাজের দ্বিগুণ বোঝা আছেই, একইসঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক সমাজসন্তান লালন-পালনের সব দায়িত্ব এককভাবে মায়ের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।পর্যাপ্ত মানসম্মত ডে-কেয়ার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীর শ্রম লাঘবের সামাজিক সমাধান করার আহ্বান জানান সমাবেশের বক্তারা। সমাবেশের আগে সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের বিপরীত দিক থেকে একটি র‌্যালি বের করে নারী সংহতি। র‌্যালিটি পল্টন মোড়, শহীদ মতিউল কাদের চত্বর ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।র‌্যালিতে নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জান্নাতুল মরিয়ম, অর্থ সম্পাদক আরিফা সুলতানা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কানিজ ফাতেমা, রাজনৈতিক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইকরামুন্নেসা চম্পা, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও নারী সংহতির নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক পপি রানী সরকার, খালেদা আক্তার, খাদিজা আক্তার অন্তরা, আফরিন আহমেদ হিয়া, রিয়া আক্তার, কেরানীগঞ্জের মান্দাইলের সংগঠক লিপি বেগম, রাশিদা আক্তারসহ নারী সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।