যত বাধাই আসুক, পুরান ঢাকার আসাবিক এলাকা থেকে দাহ্য রাসায়নিকের গুদাম সরানোর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার নিজের কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর সিটির নতুন মেয়র এবং দুই সিটির নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে সরকার প্রধানের এ ঘোষণা আসে।তিনি বলেন, এখানে তারা তাদের শোরুম রাখতে পারবে। যে পণ্য তারা উপাদন করবে তারা তা বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু গোডাউনের জন্য আমরা সম্পূর্ণ আলাদা জায়গা করে দেব। যেখানে নিরাপদে দাহ্য পদার্থগুলি থাকতে পারে।

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ জনের প্রাণহাণির পর পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিকের গুদাম সরাতে সময় বেঁধে দেয় সরকার। এরপর চকবাজার, বকশীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে সিটি করপোরেশনের টাস্কফোর্স।প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু দিন আগে যে আগুনটা লাগল এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজেই এখানে দাহ্য পদার্থ থাকতে পারবে না। তার জন্য আলাদা জায়গা আমরা খুঁজে দিচ্ছি।

পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের ব্যবসা আমরা নষ্ট করতে চাই না। কিন্তু যেখানে বসতি সেখানে গোডাউন তারা রাখতে পারবে না।

চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডে অন্তত পাঁচটি ভবন পুড়ে যায়, যেগুলোতে প্লাস্টিক দ্রব্য, রাসায়নিক কিংবা প্রসাধন সামগ্রীর গুদাম ছিল।নয় বছর আগে নিমতলীতে অগ্নিকান্ডে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পরও পুরান ঢাকার সব রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই উদ্যোগ নেওয়া হলেও ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতায় তা সম্ভব হয়নি বলে সরকারের ভাষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,যে জিনিসটায় আগুন লাগতে পারে। এতবড় একটা ক্ষতি. একবার নিমতলী হয়ে গেল। দ্বিতীয়বার আবার এই একটা ঘটনা। কতগুলি মানুষের জীবন চলে গেল।কাজেই এইখানে যে যত বাধাই দিক। কোনো বাধাই আমরা মানব না। আমরা কিন্তু সেটা নিয়ে যাব, বলেন শেখ হাসিনা।

শপথ অনুষ্ঠানে নতুন মেয়র ও কাউন্সিলরদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনারা তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। আমি আশা করব, আপনাদের সেই দায়িত্ব, কর্তব্য শপথ অনুযায়ী পালন করবেন এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।ঐতিহ্যবাহী’ ঢাকা মহানগরীকে দৃষ্টিনন্দন ও সার্বক্ষণিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

দক্ষিণ সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য যেভাবে আসাসিক ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে একইভাবে উত্তরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্যও করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা। এছাড়া জেনেভা ক্যাম্পে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ‘অত্যন্ত মানবেতর’ জীবনযাপনের কথা তুলে ধরে তাদের আসানের ব্যবস্থা করার জন্য জায়গা খোঁজার কথা বলেন তিনি। তারা যেন কাজ করে খেতে পারে সে সুযোগটাও আমরা সৃষ্টি করে দিতে চাই।

সিটি করপোরেশনগুলো যাতে নিজেদের অর্থে চলতে পারে- সে ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর দৃষ্টান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, সব সময় সরকার করবে না।

আটকে পড়া বিহারিদের আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,আটকে পড়া বিহারিদের জন্য সরকার ফ্ল্যাট করে দেবে। ইতোমধ্যে তাদের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। যেন তারাও একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, তারা বসে থেকে নয়, তারা যেন কাজ করে খেতে পারে। তারা যেন কাজ করে তাদের সংসার চালাতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা হবে।

বিহারীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, জেনারেশনের পর জেনারেশন- এখন তাদের (বিহারি) তৃতীয়-চতুর্থ জেনারেশন এসে গেছে। তাদের জেনেভা ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল, তারা পরিবার বৃদ্ধি করেছে। তারা এখন অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এসময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মতো উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মীদের জন্য আবাসনের ভবন নির্মাণ করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাদের (দক্ষিন সিটির পরিচ্ছন্নতা কর্মী) চারটি মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং হয়ে গেছে। মোট ১৩টি বিল্ডিং হবে। সেই সঙ্গে উত্তরের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য এ ধরনের বিল্ডিংয়ে ফ্ল্যাট বাসা করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।

সিটি করপোরেশনগুলোকে নিজেদের উপার্জন বাড়িয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোকে নিজেদের উপার্জন বাড়াতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আরও সক্রিয় হতে এবং জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, পাবলিক টয়লেট, বাস-রেল স্টেশন যেখানে যা আছে সবগুলো যেন পরিষ্কার থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।

স্থানীয় সরকারের নিজেদেরও করতে হবে।অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।