আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়া প্রদর্শনীতে যোগদানের জন্য আবুধাবি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সামরিক মহড়া প্রদর্শনী দেখার পাশাপাশি দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন রাশিদ আল মোকতামের সঙ্গে বৈঠকের কথাও রয়েছে তার। দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশে দেশটির বিনিয়োগ বাড়ানো। পাশাপাশি দেশটিতে আরও রফতানির সুযোগ সৃষ্টি এবং সেখানে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার কতটা বড় করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়াও সফরে বেসামরিক বিমান চলাচল, পর্যটন, স্বাস্থ্য, সামরিক সহযোগিতাসহ আরও কিছু বিষয় আলোচনার টেবিলে উঠতে পারে বলে আশা করছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিনিয়োগ : সফরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। দেশটির মনোযোগ আকর্ষণে প্রয়োজনে আমিরাতের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) গড়ে দেওয়ার আশ্বাসও দেবেন তিনি। বাংলাদেশে বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগ আছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার। সরকার মনে করে, তেল সমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রচুর তরল অর্থ আছে। আর বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশও তাদের আরও বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী।
এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন,‘দুবাই পোর্ট (ডিপি) ওয়ার্ল্ড এর বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ প্রস্তাব আছে যেগুলি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ বাংলাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে এবং আবুধাবি ইচ্ছ করলে এর একটি শুধুমাত্র তাদের বিনিয়োগকারীদের জন্য পেতে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, তারা সেমিকন্ডাক্টর বানানোতে দক্ষতা অর্জন করেছে এবং এই খাতে বিনিয়োগ করলে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে।এছাড়া তারা পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করতে পারে এবং বাংলাদেশে পর্যটন স্পট তৈরি করতে পারে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সিরামিক, সার, ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বাণিজ্য : সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে গত অর্থবছরে ১.২ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ রফতানি করেছে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর মধ্যে তৈরি কাপড়, সবজি ও অন্যান্য পণ্য রয়েছে । এর বিপরীতে আমদানি করেছে মূলত পেট্রোলিয়াম পণ্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যা রফতানি করি এবং যা আমদানি করে তারমধ্যে পার্থক্য অনেক। তবে আমরা রফতানি আরও বাড়াতে চাই ।’
শ্রম বাজার : সম্প্রতি দেশটিতে থাকা অবৈধ নাগরিকদের বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেখানে থাকা প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি বৈধ হওয়ার সুযোগ নিয়েছে। আর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দেশটিতে আবার লোক পাঠানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গৃহস্থালি কাজের জন্য বর্তমানে ১৯টি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ থেকে লোক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত । বাংলাদেশ এই বাজার দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য খোলার অনুরোধ করেছে দেশটিকে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়টির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গৃহস্থালি কর্মকাণ্ডের জন্য ড্রাইভার, মালী, বাবুর্চি, হাউস-মেইড ইত্যাদি কাজের জন্য লোক পাঠানোর সুযোগ রয়েছে।’ এছাড়াও আমিরাতের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশটিতে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং সে দেশে শ্রমিক হিসেবে যাওয়ার আগে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া বিষয়ে দুটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, ‘ এই দুটি চুক্তি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দাবি ছিল এবং আমরা সেটি স্বাক্ষর করেছি এবং আমরা আশা করি তারা তাদের শ্রম বাজার বাংলাদেশিদের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করবে।’
আমিরাতে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছে। মাঝে মাঝে নেতিবাচক কারণেও আলোচনায় আসে তারা। কারাভোগও করে। বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমিরাতে জেলে একটি ভালো সংখ্যক বাংলাদেশি আছে। এ কারণে আলোচনার সময়ে আমাদের অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে হয়।’
বেসামরিক বিমান, স্বাস্থ্য : বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত। একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে আমিরাতের পতাকাবাহী এমিরেটস ও ফ্লাই দুবাই এর কার্যক্রম আছে। তারা তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়াতে চায়।” এছাড়া তারা বাংলাদেশে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করতে চায়। বাংলাদেশ সরকারেরও বিষয়টিতে সম্মতি আছে। এর জন্য বাংলাদেশ নাহিয়ান ট্রাস্টকে চট্টগ্রামে এ একটি জমি’র ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
সামরিক সহযোগিতা : সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যুদ্ধ বহির্ভূত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে চায় আগ্রহী বাংলাদেশ। এ বিষয়ে দেশটির সম্মতি আছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, তথ্য আদান-প্রদান, প্রশিক্ষণ, মহড়াতে অংশগ্রহণ এবং এধরনের সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে দু’পক্ষে কথাবার্তা চলছে।